দেশে চলমান গ্যাস সংকট ক্রমাগত তীব্র হচ্ছে, যা প্রায় দেড় দশক ধরে স্থায়ী। বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পুরোনো এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইনের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই সংকটের মধ্যে একটি এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে থাকার কারণে গ্যাস সরবরাহে আরও বাধা সৃষ্টি হয়েছে, ফলে গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের প্রাপ্যতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের দৈনিক গ্যাস চাহিদা বর্তমানে ৪৫০ কোটি ঘনফুটের মতো, কিন্তু গত এক বছর ধরে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমনকি, বুধবার সকালে ২৫৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এতে, অধিকাংশ বাসাবাড়িতে রান্নার চুলা চলে না বা নিভু নিভু অবস্থায় থাকে, এবং বেশিরভাগ শিল্পকারখানা কার্যক্রম চালাতে পারছে না।
এছাড়া, শিল্পখাতেও গ্যাসের অভাবে উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বেশ কিছু কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এলপিজি ও সিএনজি ব্যবহারকারী শিল্পোদ্যোক্তারা অতিরিক্ত খরচে পড়ে যাচ্ছেন। বাসাবাড়ির জন্যও এলপিজি ও বোতল গ্যাস ব্যবহারে খরচ বেড়ে গেছে, অনেকেই বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক বা কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করছেন।
এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকার উত্তরাংশ এবং আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। পোশাক কারখানাগুলোর জন্য গ্যাসের চাপ ২-৩ পিএসআইতে নেমে যাওয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া, গ্যাসের সরবরাহে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর রবিবার থেকে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু হবে।
গ্যাস সংকটের ফলে সীমিত আয়ের মানুষগুলো আরও বিপাকে পড়েছেন, এবং তাদের জীবিকা নির্বাহে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। এই সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে।