প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নতুন পরিকল্পনা আনার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর। শনিবার (১১ জানুয়ারি) সিলেট সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভায় সিইসি এসব কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক করার লক্ষ্যে ইসি কাজ করছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা পাওয়ার পরই এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নিবন্ধন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যেখানে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে।”
প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও ইসি কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান সিইসি। তবে তিনি সতর্ক করেন যে, প্রথম বছরেই সব প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। “প্রথমে আমরা প্রক্রিয়া শুরু করব এবং ধাপে ধাপে সব প্রবাসী ভোটারদের তালিকায় আনব। এটি সময়সাপেক্ষ, তবে আমরা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” বলেন এ এম এম নাসির উদ্দিন।
একই দিনে সব স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “একদিনে সব স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে যাবে। বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা থাকে এবং সব নির্বাচন একই দিনে আয়োজন করতে গেলে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তাই আমরা ধাপে ধাপে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।”
জাতীয় নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, “আমরা চাই, সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করুন। তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে নীতিমালার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।”
ভোটার আইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে বিগত দিনে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এ প্রসঙ্গে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “ভোটার আইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে যারা আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইসি এ বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে।”
সিইসি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন সব সময়ই জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আমরা আশা করি, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আলোকে ইসির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, ইসি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া, প্রবাসী ভোটার অন্তর্ভুক্তি এবং ভোটার আইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, তা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করবে। ইসির এসব উদ্যোগ সফল হলে দেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলো আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।