সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিয়ে গত ৫ আগস্টের পর থেকে যে ট্রল করা হয়ে আসছে তার মধ্যে অন্যতম হলো,”আফসোসলীগ”!
এ কথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ সংগঠন গত ১৬ বছরে নিজ নেত্রীর বন্দনাগীতি আর বিরোধীদের জন্য ট্রলনীতি চালু করেছিল। কিন্তু তারা তাদের কেন্দ্রীয় চরিত্র যে,” আত্মসমালোচনা” ছিল তা তারা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল! কথায় আছে না,”সুখে থাকলে ভূতে কিলায়”। রাষ্ট্রযন্ত্রটাকে চামচামোতে পরিপূর্ণ করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের বন্দনা-তোষামোদীতে গাভীন(গর্ভবতী) করে দিয়েছিল! তাই এই দল থেকে গত ১৬ বছর হতে ৫ ই আগস্ট,২০২৪ ইং এর আগ পর্যন্ত দুনিয়ায় যত নেতৃত্বের আলো বাতাস পেয়েছে তারা সবাই চামচামির স্বভাব নিয়ে জন্মেছে! আমার দেখা শ্রেষ্ঠ বেহায়া, অসভ্যতায় পূর্ণ, আত্মসমালোচনাহীন,মারমুখী, দুশ্চরিত্রের বাহক ছিল এই আওয়ামী লীগের লোলুপ দৃষ্টির জুড়ে বসা কিছু আহাম্মকে পূর্ণ আওয়ামী লীগ ও তার ছাত্রসংগঠন,সকল প্রশাসন বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা। বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ খ্যাত গণমাধ্যমের অধিকাংশ সাংবাদিক হয়েছিল ইয়েস ম্যানে কিন্তু বর্তমানের মতো ‘মানপত্র’ ছিল না!
আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা বই বা সহপাঠ থেকে বেশ কয়েকটি উপন্যাস পড়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মোজাম্মেল হকের উপন্যাস জোহরা ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ স্যারের লালসালু উপন্যাস ও নানান গল্প । এই গল্প উপন্যাস পড়তে খুব মজা লাগতো। কিন্তু মাঝে মাঝে পড়ার ভয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে যেত যে লালসালু বা জোহরা উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা বিশ্লেষণ কর-এই প্রশ্নে!এই প্রশ্নের উত্তরে মাথা খাটাতে যেন আকাশ ভেঙ্গে যেত আর মনে মনে প্রশ্ন আসতো যে, কেন এই উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন আসবে? এটা আসলে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কিবা কাজে আসবে?
কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কেন নামকরণের সার্থকতার জন্য পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে?প্রশ্নের মান থাকে ১৫ নাম্বারের।এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক যুক্তি তর্ক আলোচনা সমালোচনা এক কথায় বিশ্লেষণ থাকে। বিশ্লেষণ থেকে আসে পরবর্তী পদক্ষেপ- সর্তকতা।
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান পৃথক হওয়ার পর পাকিস্তানের অন্তর্গত পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের প্রতি প্রতিটি ক্ষেত্রে যে বৈষম্য নির্যাতন অত্যাচার জুলুম করার স্টিম রোলার চালিয়েছিল পাকিস্তান সরকার তা থেকে বাঁচাতে-বাঙালি জাতিকে উদ্ধারে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ দলটি গঠিত হয়েছিল। সেই ১৯৪৯ সাল থেকে ২০১৮ইং সালের পূর্ব পর্যন্ত গণমানুষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নামকরণের সার্থকতা অটুট ছিলো। এখনও আছে তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ৫ই আগষ্টের বিপ্লবের বিজীতরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামের পরিবর্তে” আফসোস লীগ” নামে ট্রল করতে লাগলো যা এখনো চলমান। এই “আফসোস লীগ” নামকরণটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমার এক ইতিহাস পরিক্রমার পথে বিদ্যুৎ গতিতে পর্যবেক্ষণ করে মনে হলো, এই “আফসোস লীগ” নামকরনটি উপন্যাস জোহরা- লালসালু নামকরণের যে যৌক্তিকতা ও সার্থকতা ছিল তার চেয়ে বেশি যৌক্তিক ও সার্থক হয়েছে! এই “আফসোস লীগ”নামকরণটি কে করেছে আমি জানিনা তবে এই লোকটিকে ১৫ মার্ক পুরোই দিতে চাই।
“আফসোস লীগ” এমনি একটি উপলব্ধিপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিক নাম যে নামে, কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিঁটার মতো-এটা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার মতো- খোঁচা মারার-অন্তরে আঘাত করার-অপমান করার-চুল ধরে পানিতে চোবানোর-বেঁধে রেখে বেত দিয়ে পেটানোর-মুখে ক্লোরোফর্ম লাগিয়ে বাকহীন এবং আঘাত না করে বড় আঘাতে বোবা বানিয়ে রাখার মতো শাস্তিপূর্ণ নামকরণ বাংলার জমিনে আর দ্বিতীয়টি হয়নি বলে মনে হয়!
এই “আফসোস লীগ” নামকরণের বিকর্ষিত প্রভাবে ভুক্তভোগী দলটির প্রধান শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে যারা দলটির ভালো চায় এবং যারা কিছুটা মানবিক ও সচেতন তাঁদের হৃদয় ঝাঁলাপালা হয়ে গেছে! অনুশোচনা করা যেমন পাপ মোচন এর লক্ষণ তেমনি আফসোস লীগের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করাও যেন পাপ মোচনের লক্ষণ!
কিন্তু এই “আফসোস লীগ” আগামীতে তাদের ভুল শুধরে নিতে কি” ভয়ংকর লীগ” হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে? আর অন্যকারো দলের আগে ‘আফসোস ‘ শব্দটি কি যোগ হবে?