তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী, ইস্তাম্বুলের মেয়র করেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই অস্থিরতার মধ্যে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে, যার অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে তাদের বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকর্মী ইউনিয়ন জানিয়েছে।
গত রোববার, একটি আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র করেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগে গত বুধবার তার গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ আন্দোলনে রূপ নেয়। লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
ইমামোগলুকে একটি অপরাধমূলক সংগঠন পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ডিং এবং দরপত্র জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এরপর তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, মেয়রের বিরুদ্ধে ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’ হিসেবে তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইস্তাম্বুলের পৌরসভা পরিচালনা পরিষদ থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের উপরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী ইউনিয়ন ডিস্ক-বেসিন-ইস জানিয়েছে, অন্তত ৮ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও জনগণের সত্য জানার অধিকারের ওপর আক্রমণ। সংগঠনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে বলেছে, “সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে সত্য লুকানো যাবে না। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।”
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানান, ১৯ মার্চ মেয়রকে গ্রেপ্তারের পর থেকে মোট ১,১৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ চলাকালে ১২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং অ্যাসিড, আগুনের বোমা ও ছুরি জব্দ করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও দাবি করেন, আটককৃতদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে জড়িত এবং অন্যদের পূর্ব অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন, কিছু মহল এই বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।
ইস্তাম্বুলের মেয়রকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সরকারি কর্মকর্তারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তুরস্কের আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে।
২০১৯ সালে করেম ইমামোগলু ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন, যা এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (AKP) জন্য বড় ধাক্কা ছিল। তখন এরদোগানের দল নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবি তুললেও ইমামোগলু শেষ পর্যন্ত জয়ী হন।
বর্তমানে তিনি সিলিভ্রি কারাগারে আটক, যেখানে আরও ৪৭ জনকে বিচারের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে তার এক গুরুত্বপূর্ণ সহকারী এবং ইস্তাম্বুলের দুই জেলা মেয়র রয়েছেন। আরও ৪৪ জন সন্দেহভাজনকে বিচারিক নিয়ন্ত্রণে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাংবাদিকদের উপর দমনপীড়ন দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইমামোগলুর গ্রেপ্তার, ব্যাপক ধরপাকড় এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ফলে দেশে বিক্ষোভ আরও তীব্র হতে পারে, যা সরকারের জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।