ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের নিন্দা করলেও, গুরুত্বপূর্ণ আরব রাষ্ট্রগুলো গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্প্রসারণ করেছে— এমন তথ্য ফাঁস হওয়া মার্কিন সরকারি নথিতে উঠে এসেছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজা যুদ্ধের সময় আরব সরকারগুলো প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে নিন্দা করলেও, তারা গোপনে ঘনিষ্ঠ সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বজায় রেখেছিল। এ তথ্যের ভিত্তি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (ICIJ) এবং ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে আসা ফাঁস নথি।
নথি অনুযায়ী, অন্তত ছয়টি আরব দেশ — সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন ও কাতার ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা গঠন (Regional Security Framework)’ নামে একটি গোপন প্রতিরক্ষা কাঠামোর অংশ ছিল। এছাড়া কুয়েত ও ওমানকে ভবিষ্যতের অংশীদার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল এবং উল্লিখিত আরব দেশের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা বাহরাইন, মিশর, জর্ডান ও কাতারে পরিকল্পনা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তি ও গাজা থেকে আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখতে ২০০ মার্কিন সেনা ইসরায়েলে মোতায়েন করা হবে, যেখানে আরব মিত্র দেশগুলোর সৈন্যরাও অংশ নেবে।
এর আগেই উপসাগরীয় কিছু আরব রাষ্ট্র গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের ২০ দফা পরিকল্পনায় সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে আরব দেশগুলোকে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী হিসেবে মোতায়েন ও নতুন ফিলিস্তিনি পুলিশ গঠনে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফাঁস হওয়া নথিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘ইরানের হুমকি’ ছিল ইসরায়েল ও আরব দেশের এই ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্কের মূল প্রেরণা। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) এর মাধ্যমে এই সম্পর্ক সমন্বয় করা হয়।
এক নথিতে ইরান ও তার মিত্রদের ‘অ্যাক্সিস অব ইভিল’ (Axis of Evil) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্য নথিতে গাজা ও ইয়েমেনে ইরানি মিত্রদের ক্ষেপণাস্ত্র অবস্থান মানচিত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ICIJ এবং ওয়াশিংটন পোস্টের যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফাঁস নথির তথ্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অফিসিয়াল নথি, সামরিক মহড়া ও ঘোষণার তারিখের সঙ্গে মিলে গেছে, যা এর সত্যতা নিশ্চিত করে।
তবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ছয়টি আরব দেশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সেন্টকমের কর্মকর্তারাও মন্তব্যে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।