বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নানা পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর একটি হচ্ছে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় অস্টিওপোরোসিস। ষাটের কোঠা পেরোলেই প্রায় সকলের এই রোগ দেখা দেয় এবং বয়স যত বাড়ে, হাড়ের ঘনত্ব (Bone Density) তত কমে যেতে থাকে। ফলে হাড় ভাঙার ঝুঁকিও দ্রুত বেড়ে যায়।
অনেক সময় বয়স্কদের পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার পরে, বিশেষ করে শতবর্ষী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, শারীরিক ও মানসিক ধকল এমনভাবে শরীরকে দুর্বল করে তোলে যে, তিন মাসের মধ্যেই অনেকের মৃত্যু ঘটে। তাই এই বয়সে মূল চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধই হতে পারে জীবন বাঁচানোর মূল কৌশল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ষাটোর্ধ্বদের হাড় শক্ত রাখার চেয়ে বেশি জরুরি হলো “পড়ে যাওয়া” প্রতিরোধ করা। আর এ প্রতিরোধের মূলমন্ত্র চারটি শব্দে: “সাবধান, সাবধান, সবসময় সাবধান।”
১. চেয়ার বা টুলে উঠে কিছু ধরবেন না। খাট বা মই ব্যবহার না করে অন্যের সাহায্য নিন।
২. বৃষ্টির দিনে বাইরে হাঁটবেন না। রাস্তায় পিচ্ছিলতা বৃদ্ধির কারণে হোঁচটের আশঙ্কা বেশি থাকে।
৩. বাথরুম ব্যবহার করার সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।
নারীরা বাথরুমে দাঁড়িয়ে কাপড় বদলাবেন না।
ভেজা মেঝেতে হাঁটবেন না।
কমোড ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন ও দেয়ালে হ্যান্ডল লাগিয়ে নিন।
গোসলের সময় বসে পানি ব্যবহার করুন।
৪. রাতে ঘুমানোর আগে নিশ্চিত করুন ঘর পরিষ্কার ও শুকনো।
৫. ঘুম ভাঙলে হঠাৎ উঠে দাঁড়াবেন না। আগে পাশে বসে বাতি জ্বালিয়ে নিন।
রাতে বাথরুমের দরজা লক করবেন না। প্রয়োজনে এলার্ম বেল লাগান।
সিঁড়ি ব্যবহারে হাত রেলিংয়ে রাখুন। দুই হাত পকেটে রেখে চলাফেরা করা ঝুঁকিপূর্ণ।
হাঁটাচলা করুন। সারাদিন বিছানায় না শুয়ে কয়েক মিনিট অন্তর অন্তর হাঁটার অভ্যাস গড়ুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বেশি খাওয়া নয়, পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন।
রোদে থাকুন। রোদে কিছুক্ষণ থাকলে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
পড়তে গেলে হাত দিয়ে মাটি ধরার চেষ্টা করুন। এতে কোমরের বদলে হাত ভাঙলেও তা দ্রুত সারবে।
একবার পড়ে গিয়ে বড় ধরনের ব্যথা পেলে গড়ে ১০ বছর আয়ু কমে যায়। হাড় ভাঙলে অপারেশন বা চিকিৎসা তেমন সুফল দেয় না। বরং শুয়ে থাকা মানেই মৃত্যু দ্রুত ডেকে আনা। তাই আগেভাগেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
বয়স্ক ব্যক্তি বা তাঁদের পরিচর্যাকারী যেকোনো ব্যক্তি এই বিষয়গুলো মেনে চললে দুর্ঘটনা এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।