ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২১টি স্থান ভেঙে প্রবল পানির তোড়ে ডুবে যাচ্ছে একের পর এক জনপদ। এতে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১টা থেকে সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। ফেনীস্থ সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, স্পিডবোটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিন উপজেলায় অভিযান সম্প্রসারিত হবে।
ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ সতর এলাকার বাসিন্দা রবিউল হাসান বলেন, “বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে।” তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেশে সরকার পরিবর্তন হলেও আমাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না।”
নজরুল ইসলাম নামে আরও এক ভুক্তভোগী জানান, “সড়কে পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখনো শুকনো খাবার বা প্রশাসনের সহায়তা পাইনি।” তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলেন।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ফেনীতে চার দিন ধরে টানা মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫০.৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং হালকা বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদীর পানি বিপৎসীমার ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভাঙনস্থল দিয়ে প্রবল গতিতে পানি ঢুকছে। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “পানি কমার পর বাঁধ মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, চারটি উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে এবং জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।