
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে সকাল ৬.৩০ মিনিটে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং ৭১-এর শহীদদের স্মরণে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা বিএনপি, প্রেসক্লাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণকবর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা প্রদান, এবং দিঘলিয়া উপজেলা প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ছিল বিজয় মেলা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রীতি ফুটবল খেলা, আলোচনা সভা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ কার্যক্রম।
বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, “আজ আমরা মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছি। এটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, ত্যাগ এবং অদম্য সাহসের ফসল। ৩০ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। আজকের দিনে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানাই।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসিত ও উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে প্রতিটি মানুষ পাবে নিজের মর্যাদা, পরিচয় ও স্বাধীনতা।”
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি দেবাংশু বিশ্বাস, অফিসার ইনচার্জ শাহ্ আলম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, খাদ্য ও সমাজসেবা কর্মকর্তারা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, যেমন—সর্দার শহিদুল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল হামিদ, গাজী আজগর আলী ও কামরুজ্জামান বাচ্চু। এছাড়াও উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন, দিঘলিয়া প্রেসক্লাব এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনও পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানগুলোতে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, শরীরচর্চা প্রদর্শন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা, স্বাস্থ্যকর্মসূচি, এতিমখানায় বিশেষ খাবার বিতরণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় এবং আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার তাৎপর্য তুলে ধরার মাধ্যমে জাতীয় চেতনা জাগ্রত করা হয়।
দিঘলিয়ায় বিজয় দিবসের এই উদযাপন বাঙালি জাতির একতা, সাহস, ত্যাগ ও মুক্তির চেতনার চিত্র তুলে ধরেছে, যা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গীভূত। অনুষ্ঠানগুলো স্থানীয় সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণে সফলভাবে সম্পন্ন হয়।