পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শাহিদা বেগমের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা দেওয়ার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শাহিদা বেগম তার নির্বাচনী এলাকা গদারহাওলা ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডের দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছ থেকে ভিডব্লিউবি (ভিজিডি), বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, পানির ট্যাংকি, টিসিবি ও মৎস্য কার্ড করে দেওয়ার আশ্বাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নতুন অর্থবছরের ভিজিডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শাহিদা বেগম ৫ জনের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধী কার্ড বাবদ মুহিন শেখের কাছ থেকে ২,৫০০ টাকা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড বাবদ নাদিরা বেগমের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়েছেন। মৎস্য কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরও ছয়জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩,৫০০ টাকা করে মোট ২১ হাজার টাকা ও পানির ট্যাংকি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ জনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, এলজিএসপি প্রকল্পের অধীনে দুইটি রাস্তার জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও, ইউপি সদস্য শাহিদা বেগম বাড়ির রাস্তার ইট সলিং করে দেওয়ার অজুহাতে লক্ষীদিয়া এলাকার সোহাগ শেখসহ সাত পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং বাটাজোড়ের হাকিম মাতুব্বরসহ তিনটি পরিবারের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা আদায় করেছেন। যদিও সোহাগ শেখের বাড়ির রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে, অন্যদিকে হাকিম মাতুব্বরের বাড়ির রাস্তায় এখনো কাজ শুরু হয়নি এবং যেসব ইট সরবরাহ করা হয়েছে তা নিম্নমানের বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী, কেউ কেউ কার্ড না পাওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে ইউপি সদস্য বিভিন্ন টালবাহানা করেন। কেউ কেউ আংশিক টাকা পেলেও বেশিরভাগ পরিবারই এখনো অর্থ ফেরত পাননি। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আ: রাজ্জাক হাওলাদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক এবং প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য শাহিদা বেগম নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক করা হয়েছে, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই এই অভিযোগ।” তবে ইউপি চেয়ারম্যান আ: রাজ্জাক হাওলাদার স্বীকার করেছেন যে, তার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে এবং তিনি উক্ত ইউপি সদস্যকে মীমাংসার নির্দেশ দিলেও এখনও কেউ অর্থ ফেরত পাননি বলে জানিয়েছেন।
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান বীন মুহাম্মদ আলী বলেন, “কেউ যেন কোনো ভাতা বা কার্ডের জন্য টাকা না দেয়। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে এখনও কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনা শুধু একটি ইউনিয়ন নয়, বরং দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি সুবিধা নিয়ে দুর্নীতির বহুল প্রচলিত চিত্রের প্রতিফলন। সরকারি ভাতা বা সেবার নামে অর্থ আদায় করে নিরীহ ও দরিদ্র জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকলে, প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।