
রাজধানী ঢাকায় ২২ লাখ ভবনের মধ্যে ২১ লাখই ঝুঁকিপূর্ণ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এসব ভবনের বেশিরভাগই নির্মিত হয়েছে বিল্ডিং কোড ও নকশা অনুসরণ না করে। সাম্প্রতিক তিন দফা ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।
রাজউকের তথ্যমতে, মোট ভবনের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ ভবনই দ্বিতল বা এর নিচে হওয়ায় তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে চার থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত ৬ লাখ বহুতল ভবনকে উচ্চঝুঁকিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকায় এ ঝুঁকি আরও বেশি, কারণ সেখানে মাত্র এক কাঠার কম জমিতেই পরিকল্পনাহীনভাবে ৬–৭ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। তিনি জানান, শহরের সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শুক্রবার মিরপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ পুরোনো ভবনই বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত। তার মতে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো স্পষ্টভাবে সতর্কবার্তা দিচ্ছে—ঢাকা এখন ভয়াবহ ঝুঁকিতে। তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে এত শক্তিশালী কম্পন কখনো অনুভব করিনি। এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।”
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জরিপ বলছে, রাজধানীর বেশিরভাগ ভবনের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অনেক জায়গায় রড–সিমেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, আবার অনেক ভবন নির্মিত হয়েছে অনুমোদিত নকশার বাইরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, ঢাকার অনেক এলাকাই বহুতল ভবন নির্মাণের উপযোগী নয়। সঠিক মাটি পরীক্ষা ছাড়া ভবন নির্মাণ, রাজউকের অনুমোদনহীন ভবন এবং ভূমিকম্প–সহনশীল নকশার অভাব রাজধানীর ঝুঁকি বাড়িয়েছে বহুগুণ।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৭৪ শতাংশ ভবন নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ভাঙার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেফটি অ্যাওয়্যারনেস ফাউন্ডেশনের এক সেমিনারে জানানো হয়, ঢাকায় অন্তত ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবন ভূমিকম্পে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক–সহায়িত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পে দেখা গেছে, সরকারিভাবে নির্মিত নতুন ভবনের ৩৭ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ১৭ তলা ভবনসহ ডজন ডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নগরবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, ঢাকার ১৩ শতাংশ এলাকায় কোনোভাবেই ভবন নির্মাণ করা উচিত নয়, কিন্তু সেখানে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি সংকীর্ণ গলি, হাইরাইজ ভবন, গ্যাস–বিদ্যুতের অপরিকল্পিত সংযোগ বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে ঢাকায় বসবাস করা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলে মত দিয়েছেন তারা।