ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানুয়ারি মাস থেকে ভর্তুকি মূল্যের পণ্য স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে এতে আগে পণ্য পেয়ে আসা এক কোটি পরিবারের মধ্যে ৪৩ লাখ পরিবার বাদ পড়েছে। আপাতত ৫৭ লাখ স্মার্টকার্ডধারী পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পুরোনো কাগুজে পরিবার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে শুধুমাত্র নতুন স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সাবেক সরকারের সময়ে এক কোটি পরিবারের মধ্যে কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। তবে এসব কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ওই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে শুরু করে। যাচাই-বাছাই শেষে ৪৩ লাখ পরিবারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫৭ লাখ পরিবারের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করে সরবরাহ করা হয়েছে। আরও ৩৫ থেকে ৪০ লাখ স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মোট ৬৩ লাখ স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করেছি। ফলে আরও পরিবার এই সুবিধা পাবে।’
টিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যাঁরা সচ্ছল বা একই পরিবারের একাধিক কার্ডধারী ছিলেন, তাঁদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাঁদের নাম-ঠিকানায় ভুল ছিল, তাঁদেরও নতুন স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়নি।
টিসিবি জানিয়েছে, সারা দেশে ইতিমধ্যে ৫৭ লাখ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। নতুন ছয় লাখ কার্ড তৈরির কাজ চলছে, যা চলতি জানুয়ারি মাসেই বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি আরও ১৩ লাখ পরিবারের তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
জানুয়ারি মাসে স্মার্টকার্ডধারীরা তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন— ভোজ্যতেল: প্রতি লিটার ১০০ টাকা, মসুর ডাল: প্রতি কেজি ৬০ টাকা, চিনি: প্রতি কেজি ৭০ টাকা, একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল এবং এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন।
ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বিক্রির তালিকায় চাল ছিল। তবে জানুয়ারিতে কোনো স্থানে চাল বিক্রি করেননি টিসিবির সরবরাহকারীরা। তবে খাদ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে ৫৭ লাখ পরিবারের জন্য টিসিবিকে চাল সরবরাহ করা হবে।
স্মার্টকার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে যে দাম বেড়েছে, খুচরা পর্যায়ে তার চেয়ে অনেক বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে চালের ঘাটতি নেই। সরকারি মজুত, স্থানীয় উৎপাদন ও সংগ্রহেও কোনো ঘাটতি নেই। আমনের ভরা মৌসুম চলছে। তাই চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মজুতদারির কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানি উদারীকরণের উদ্যোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা গভর্নর, খাদ্য উপদেষ্টা, টিসিবি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বাজারে সরবরাহব্যবস্থার উন্নতির জন্য আপাতত আমদানিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও জানান, বড় পরিমাণ চাল আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং দামও কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্মার্টকার্ড চালুর মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ৪৩ লাখ পরিবার বাদ পড়ায় তাদের ক্ষোভ ও উদ্বেগ রয়েছে। পাশাপাশি মজুতদারির কারণে চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সরকারকে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।