দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির ঘটনায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশটির জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আকস্মিকভাবে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল তার সরকারের বিরোধী দল, বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ এর অভিযোগ তুলে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন। তার এই সিদ্ধান্তের পর দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পূর্ববর্তী ৫০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন হঠাৎ সামরিক আইন জারি করা বিরল ঘটনা, যা গণতান্ত্রিক এই দেশে এক বড় ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল তার বক্তব্যে বলেন, “উত্তর কোরিয়ানপন্থী গোষ্ঠী দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে” এবং এরই মধ্যে বিরোধী দল, বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছেন।
এই পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টের বাইরে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ জানাতে সমবেত হয় এবং প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোটাভুটির আয়োজন করেন আইনপ্রণেতারা। দ্রুত গতিতে এই ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুকের পক্ষ থেকে সামরিক আইনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। এর পর পরই, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
একই সময়ে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন গণমাধ্যমের মাধ্যমে এক বার্তায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “সামরিক আইন সংক্রান্ত সব ঘটনার জন্য আমি নিজেকে দায়ী মনে করছি। জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি এবং উদ্বেগ সৃষ্টির জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।” তিনি আরও বলেন, “এজন্য আমি প্রেসিডেন্টের কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।”
এই ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের পদত্যাগের ব্যাপারে নানা রকম আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, এর ফলে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল তার নিজ দলের মধ্যেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন।
এটি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসের একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সামরিক আইন জারির মতো পদক্ষেপের ফলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের প্রতি দেশটির জনগণের আস্থা পরীক্ষার মুখে পড়েছে।