ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রনেতার হোয়াইট হাউস সফর। ট্রাম্পের এই আমন্ত্রণকে ইসরায়েলের প্রতি তাঁর শক্তিশালী সমর্থন ও মিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতিমধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নেতানিয়াহুর পাশাপাশি দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট ও হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, গত জুলাইয়ে মোহাম্মদ দেইফকে হত্যা করা হয়েছে, যদিও তাঁর জীবিত থাকার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
আইসিসির রায়ে বলা হয়েছে, অন্তত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২০ মে পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে গাজার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর মতো গুরুতর অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ছয় সপ্তাহের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যেই নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। যুদ্ধবিরতির ফলে ১৫ মাস ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের সাময়িক অবসান ঘটেছে। গাজা পরিস্থিতির মধ্যে আইসিসির পরোয়ানা উপেক্ষা করেই ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য মিসরকে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিসরের উচিত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া, যেহেতু অঞ্চলটির বেশির ভাগ মানুষ ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ঘরছাড়া হয়েছেন। তবে মিসর ও জর্ডানসহ অন্যান্য আরব দেশগুলো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ তারা মনে করে গাজা ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার পর থেকে গাজায় নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। ইসরায়েল দাবি করেছে, ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জন জিম্মি করা হয়। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে, যদিও ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
চলতি মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, যার প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি থাকবে। এই চুক্তির আওতায় হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী কয়েক শ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে।
যুদ্ধবিরতির ফলে গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ১৫ মাস ধরে চলা সংঘর্ষে শহরটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং অবিলম্বে টেকসই শান্তির প্রয়োজন রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং ট্রাম্পের গাজা সংক্রান্ত মন্তব্য বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।