1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
পাঠ্যবই সরবরাহে সংকট: কাগজের অভাব ও নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য - RT BD NEWS
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৫:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা, গাজা হবে ‘ফ্রিডম জোন’ ১ জুলাই থেকে ইন্টারনেটের দাম কমছে ২০ শতাংশ শিল্প খাতে গ্যাস-সংকট: উৎপাদন, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে চরম প্রভাব ভারত থেকে পুশ ইন বাড়ায় সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি শ্রীনগর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই ৫০টি দোকান ঐশ্বরিয়া রাইকে দেখতে কানে সাংবাদিকদের ভিড়, শেষ পর্যন্ত এলে না চীন ও রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক জোরদারে প্রস্তুত বেইজিং মালয়েশিয়ায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা: আসিফ নজরুল দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের কোকো গাছ টাঙ্গাইলে আবাদ হচ্ছে ঝিনাইদহে প্রচণ্ড গরমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি

পাঠ্যবই সরবরাহে সংকট: কাগজের অভাব ও নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
বই

সরকার প্রতিবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে যে উদ্যোগ নেয়, তা নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষাবর্ষের অন্যতম বড় কার্যক্রম। তবে এবার সেই উদ্যোগে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাগজের ভয়াবহ সংকট। কাগজের এই সংকটের কারণে পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি হচ্ছে এবং বই যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অবৈধ নোট ও গাইড বই ছাপানোর কারণে কাগজের সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন জেলার প্রশাসকদের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবারের মতো এবারও জানুয়ারির শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কাগজ সংকটের কারণে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ মারাত্মকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুযায়ী, এবার ৪০ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ১১৬টি ছাপাখানা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলো দিনে প্রায় ৪০ লাখ বই ছাপানোর সক্ষমতা রাখে। কিন্তু কাগজের অভাবে তারা দিনে ২০ লাখ বইও ছাপাতে পারছে না।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাগজ সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ অবৈধ নোট ও গাইড বই ছাপানো। কিছু অসাধু প্রেস মালিক সরকারকে উপেক্ষা করে পাঠ্যবইয়ের বদলে নোট ও গাইড বই ছাপিয়ে বাজারে সরবরাহ করছেন।

পাঠ্যবই ছাপানোর চেয়ে নোট ও গাইড বই ছাপিয়ে ২০ গুণ বেশি মুনাফা করা যায়। এ কারণে একশ্রেণির প্রেস মালিক সরকারি কার্যাদেশ পাওয়ার পরও পাঠ্যবই ছাপানোয় আগ্রহী হচ্ছেন না। বরং তারা নোট-গাইড বই ছাপিয়ে কৃত্রিম কাগজ সংকট তৈরি করছেন।

শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই তুলে দিতে সরকার মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসককে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারি মাস জুড়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ চলবে। এ সময়ে কোনো প্রেস যেন নোট, গাইড বই, ডায়রি বা ক্যালেন্ডার না ছাপায়, তা নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে ঢাকা জেলার ১১৬টি ছাপাখানার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জেলা প্রশাসককেও একই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন, কাগজের অভাবের কারণে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিন বই ছাপাতে যে পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন, তার অর্ধেক কাগজও তারা পাচ্ছেন না।

এ অবস্থায় কাগজের মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট টনপ্রতি কাগজের দাম মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

অবৈধ নোট ও গাইড বই ছাপানোর কারণে কাগজের সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনি কাগজের মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। প্রেস মালিকরা বেশি দামে নিম্নমানের কাগজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যা এনসিটিবির মনিটরিং টিম থেকে বাতিল করা হচ্ছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেস মালিকরা সচেতনভাবেই দরপত্র দিয়ে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ নিয়েছেন। তাই যে করেই হোক নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহ করতে হবে।

তবে প্রেস মালিকদের অভিযোগ, অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বর মাসে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও এবার তা ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়েছে। ফলে ছয় মাসের কাজ এক মাসে শেষ করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

তাছাড়া কাগজের সংকট পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বাজারে লেকচার, পাঞ্জেরী, অ্যাডভান্সড, পপিসহ ৫০টি পাবলিকেশন্স গত ১৫ বছর ধরে অবৈধ নোট ও গাইড বইয়ের ব্যবসা করে আসছে।

এদের মধ্যে অনেক পাবলিকেশন এবারও এনসিটিবির পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ পেয়েছে। কিন্তু তারা পাঠ্যবইয়ের বদলে নোট ও গাইড বই ছাপিয়ে তা মজুত করে রেখেছে।

এ বছর এনসিটিবি মাধ্যমিক স্তরের বই তদারকির দায়িত্ব দিয়েছে ‘ব্যুরো ভেরিটাস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রাথমিক স্তরের বই তদারকির দায়িত্বে রয়েছে ‘ফিনিক্স’।

তবে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

প্রেস মালিকরা অভিযোগ করেছেন, ব্যুরো ভেরিটাসের ডেপুটি ম্যানেজার আফজাল কবির অর্থের বিনিময়ে নিম্নমানের কাগজকে ভালো মানের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।

তিনি বড় প্রেস মালিকদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং ছোট প্রেস মালিকদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আফজাল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে নোট ও গাইড বই ছাপানোর অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দুটি প্রেসে অভিযান চালিয়েছে।

গতকাল পরিচালিত এই অভিযানে লেটার এন্ড কালার প্রিন্ট এবং অনুপম প্রিন্ট নামের দুটি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধ নোট-গাইড বই ধ্বংস করা হয়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজেও নিয়োজিত ছিল।

গত ১ জানুয়ারি ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সকল শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো হবে।” তবে কাগজ সংকটের কারণে বই সরবরাহে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে কাগজ সংকট এবং অবৈধ নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্যের কারণে সেই উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কাগজের বাজার নিয়ন্ত্রণ, প্রেস মালিকদের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি এবং নোট-গাইড বই ছাপানো বন্ধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান অব্যাহত থাকলে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলে পাঠ্যবই সরবরাহে চলমান সমস্যার সমাধান হতে পারে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট