দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কার্যত ভাঙনের মুখে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন এবং তার ভারতে পলায়নের পর থেকেই এই সম্পর্ক ক্রমশ হিমশীতল হয়ে ওঠে। সম্প্রতি এ পরিস্থিতি আরও চরমে পৌঁছেছে, যা উভয় দেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার হন। তার মুক্তির দাবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় আন্দোলন শুরু করে বিজেপি ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এ ধারাবাহিকতায় ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশন কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় হিন্দু সংঘর্ষ জোটের কর্মীরা।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই টানাপোড়েনের মূল শেকড় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের মধ্যে নিহিত। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভারতের প্রতি বাংলাদেশের বৈরী মনোভাব আরও প্রকট হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনাকে শিক্ষার্থী-জনতার ওপর গুলি চালানোর জন্য দায়ী করেন এবং তাকে প্রত্যার্পণের আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূসকে আন্দোলনে গণহত্যার পরিকল্পনার জন্য দায়ী করেন।
সরকার পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এসব ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে এবং নয়াদিল্লি এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে বর্তমান সরকার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সংখ্যালঘুদের বেশি সুরক্ষিত রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাইকমিশনে হামলার ঘটনা দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা আরও বাড়াবে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা বলেছেন, উভয় দেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অগ্রসর হতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় দেশকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। “মব কালচারের” অবসান এবং পারস্পরিক আস্থা পুনঃস্থাপনই পারে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে।