বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন যে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হবে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছে। দলগুলো একবার একমত হলে, তারা ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে, যা রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের রূপরেখা নির্ধারণ করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেই তিনি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘পৃথিবীতে এত বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি।’ তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যেন সম্মানের সঙ্গে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরতে পারে, সে বিষয়ে জাতিসংঘ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতা চান, যাতে রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত ও সংকটাপন্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পেয়েছে। তবে অর্থনীতি এখন সুসংহত হয়েছে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশংসা করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।
বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা সার্কের বর্তমান অবস্থা ও বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া, চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বন্দর নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কেও আলোচনা হয়, যা নেপাল, ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ বাড়াবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান এবং এসডিজি–বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।