আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় গ্রহণের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন নিরসনে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরকারি বৈঠক, যা বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আয়োজিত হচ্ছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, বৈঠকের এজেন্ডা চূড়ান্ত করতে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে বিদ্যমান চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, এবং আগের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। বিশেষভাবে আলোচিত হতে পারে, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক আবেদন, ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় স্থগিত প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু করা, ভিসা ইস্যুতে ভারতের সীমাবদ্ধতা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় হাই কমিশন বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা প্রদান সীমিত করেছে। এ ছাড়া, ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আওতাধীন বেশ কিছু প্রকল্প স্থগিত রয়েছে, কারণ ভারতীয় ঠিকাদাররা নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে বাংলাদেশে ফিরে আসেননি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের কারণে ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্ক কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা হবে।
দক্ষিণ এশীয় সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা কমাতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অত্যন্ত জরুরি।”
এর আগে, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেখা করেছেন। তবে, তখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কোনো বৈঠক হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বৈঠক দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ঢাকায় বৈঠকের সঠিক দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার জন্য বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনে এই বৈঠক হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাতেও ভূমিকা রাখতে পারে।