মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল ড. বিবেক মূর্তি অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয়ের বোতলে ক্যানসার–সংক্রান্ত সতর্কবার্তা উল্লেখ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এই সতর্কবার্তা প্রকাশের পর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহল প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিবেক মূর্তি তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, অ্যালকোহল পান স্তন, কোলন, যকৃতসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘প্রতিদিন একটি বা তার কমসংখ্যক মদ্যপানও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।’
সার্জন জেনারেলের এই সতর্কবার্তা প্রকাশিত হওয়ার পর অ্যালকোহল পণ্য ও বিয়ার প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্রুত কমতে শুরু করে। জ্যাক ড্যানিয়েলসের মালিক ব্রাউন–ফোরম্যান কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ কমে ৩৭.১০ ডলারে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর এই কোম্পানির শেয়ারের দাম এতটা নিচে নামেনি। কুরস লাইট বিয়ার প্রস্তুতকারী মলসন কুরস কোম্পানির শেয়ারের দাম ২.৭ শতাংশ কমেছে। করোনা বিয়ার প্রস্তুতকারী কনস্টেলেশন ব্র্যান্ডস কোম্পানির শেয়ারের দাম ১.৩ শতাংশ কমেছে। বস্টন বিয়ারের শেয়ারের দাম একপর্যায়ে ৬.৪ শতাংশ কমে যায়, তবে দিন শেষে পতন ছিল ৩ শতাংশ।
মার্কিন শেয়ারবাজারের মতো ইউরোপের বিভিন্ন অ্যালকোহল প্রস্তুতকারী কোম্পানির শেয়ারের দামও পতনের মুখে পড়েছে। দিয়াজিও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্পিরিট প্রস্তুতকারী কোম্পানি। তাদের শেয়ারের দাম ৩.৭ শতাংশ কমেছে। দিনের একপর্যায়ে এই পতন ছিল ৪.১ শতাংশ। ফরাসি স্পিরিট প্রস্তুতকারী পেরনো রিকার্ড কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ কমেছে। এই কোম্পানি মারটেল কনিয়াক, মাম শ্যামপেন ও অ্যাবসলুট ভদকা তৈরি করে। রেমি ও ক্যামপারি কোম্পানির শেয়ারের দাম অন্তত ৪.৫ শতাংশ কমেছে। বিয়ার প্রস্তুতকারী আনহইজার–বুশ ইনবেভ কোম্পানির শেয়ারের দাম ২.৭ শতাংশ কমেছে। এই কোম্পানি বাডউইজার বিয়ার তৈরি করে। হেইনিকেন ও কার্লসবার্গ কোম্পানির শেয়ার ১ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
এখনও স্পষ্ট নয় যে সার্জন জেনারেলের এই সতর্কবার্তা আদৌ কার্যকর হবে কি না। অ্যালকোহলজাতীয় পণ্যের বোতলে সতর্কবার্তা যোগ করার বিষয়টি কংগ্রেসের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।
রানিং পয়েন্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজারসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মাইকেল অ্যাশলি শুলম্যান বলেন, ‘আমেরিকানরা সাধারণত বিশ্বাস করেন, যেকোনো কিছু অল্প করে খেলে তেমন ক্ষতি হয় না। সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও ধূমপান কমেনি। অ্যালকোহলের ক্ষেত্রেও একই দশা হতে পারে।’
বিবেক মূর্তির সতর্কবার্তার প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালকোহল পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
সতর্কবার্তা কার্যকর হলে ভবিষ্যতে এই শিল্পে আরও বড় ধরনের সংকট আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।