বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার বা ২৫৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই পরিমাণ ছিল ২.০২ বিলিয়ন ডলার। এই বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করছে।
রোববার (২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রমজান ও দুই ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা সাধারণত পরিবারের জন্য বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠান। চলতি বছরেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। রোজাকে কেন্দ্র করে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, খোলা বাজারের তুলনায় আনুষ্ঠানিক মুদ্রাবাজারের ডলারের দামের ব্যবধান কম থাকায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এতে অর্থনীতিতে বৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহিত হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২.১২ বিলিয়ন ডলার, যা ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২.৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা সাত মাস ধরে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ২.৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা তখনকার সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সেই রেকর্ড ভেঙে ২.৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় মাইলফলক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক প্রভাব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও পড়ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী হিসাব করা রিজার্ভের পরিমাণ ২০.৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে এই পরিমাণ ২৬.১১ বিলিয়ন ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সামনের দিনগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে।