সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় সনদ না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানি করতে পারেনি ব্রাজিল। বুধবার (আজ) রাজধানীর বারিধারায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস এ কথা জানান।
ব্রাজিল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানিতে আগ্রহী ছিল। সর্বশেষ গত এপ্রিলে ব্রাজিল প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪.৫ মার্কিন ডলারে (প্রায় ৪৯৫ টাকা) রপ্তানির প্রস্তাব দেয়। সে সময় ঢাকার বাজারে গরুর মাংসের দাম ছিল ৮০০ টাকার কাছাকাছি। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ব্রাজিলের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি।
রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরেস জানান, ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরু ও পোলট্রি মাংস উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের অনেক মুসলিমপ্রধান দেশে ব্রাজিলের গরুর মাংস রপ্তানি করা হলেও বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সনদের অভাবে তা সম্ভব হয়নি।
রাষ্ট্রদূত জানান, গরুর মাংস রপ্তানির জন্য তিনি প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে বলা হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলায় লেখা নীতিমালা দেখান, যা তিনি বুঝতে পারেননি। তবে এক কথায় তিনি বুঝতে পেরেছেন, সনদ অনুমোদন না পাওয়ায় রপ্তানি প্রক্রিয়া আটকে গেছে। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যাবে।’’
শুধু মাংস রপ্তানিই নয়, বাংলাদেশে কৃষি, ওষুধশিল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে চায় ব্রাজিল। পাওলো ফেরেস জানান, কৃষিতে ব্রাজিল একটি শক্তিশালী দেশ। বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে কৃষি উৎপাদন ও প্রযুক্তি নিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। ব্রাজিলের মানুষেরা বছরে মাথাপিছু ১০০ কেজি গরুর মাংস খায়। সেখানে বাংলাদেশে এই হার অনেক কম। ব্রাজিলে একটি গরু থেকে দিনে গড়ে ৪৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশে সাত থেকে আট কেজি।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘‘শুধু মাংস রপ্তানি নয়, প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমেও আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারি। তবে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’’
ব্রাজিলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা কর্মসূচি রয়েছে। এ কারণে দেশটি প্রচুর ওষুধ কিনে থাকে। বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য এটি বড় সুযোগ। তবে সনদ বা সার্টিফিকেশনের জটিলতা এ ক্ষেত্রে বড় বাধা।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) সহ-সভাপতি মো. সাইফুল আলম জানান, আগামী ১৫ থেকে ১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে প্রথমবারের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে।
এই প্রদর্শনী বাংলাদেশি আমদানিকারকদের নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, ‘‘ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় বছরে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার পণ্য। তবে বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানি হয় মাত্র ১০০ কোটি ডলারের পণ্য। এই প্রদর্শনী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।’’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে ১০০ থেকে ১৫০ জন ব্যবসায়ী প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকরা ব্রাজিলে ব্যবসায়িক সংযোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি সয়াবিন, চিনি ও শিল্পের যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য আমদানির সুযোগ পাবেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিসিসিআই মহাসচিব মো. জয়নাল আবেদীন।