দেশে বিদ্যমান পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলন শুরু হয়েছে।
জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সারজিস আলম শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোষ্য কোটা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “পোষ্য কোটা নামক তেলা মাথায় তেল দেওয়া কালচার অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।”
গত ১৪ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনে বসেন। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নন। তারা বেতনসহ নানা সুবিধা পাচ্ছেন। এরপরও তাদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা অযৌক্তিক। এই সুবিধা বাতিল করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারও পোষ্য কোটা বাতিলে সোচ্চার। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ফেল করা সত্ত্বেও পোষ্য কোটায় বিশেষ সুপারিশে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন অনেকে। তিনি অভিযোগ করেন, এটি প্রক্সি কাণ্ডের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
একটি পোস্টে আম্মার বলেন, “পোষ্য কোটা বাতিল না হলে প্রয়োজনে এই আন্দোলনে প্রথম প্রাণটা আমিই দিব।” তিনি আরও বলেন, “পোষ্য কোটা একটি অযৌক্তিক ব্যবস্থা, যা ১৯৭৭ সালে রাবির তৎকালীন উপাচার্য আব্দুল বারী চালু করেছিলেন। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই কোটাকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করার।”
পোষ্য কোটা প্রথম চালু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি অনুসরণ করে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দাবি, এটি চাকরির মতো কোনো কোটা নয়, বরং একটি সুবিধা। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যের একটি বড় উদাহরণ।
সারজিস আলম ও সালাহউদ্দিন আম্মারের মতো নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তাদের নেতৃত্বেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সরকার পতনে ভূমিকা রাখে।
পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠার নতুন অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। তবে এই কোটা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।