ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের মতুঙ্গা থানা এলাকায় নিজের ৪৫ দিনের শিশুকে বিক্রি করে স্বামীর জামিনের টাকা জোগাড় করার এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে। এই ঘটনায় মানবপাচারের অভিযোগে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ জন নারী।
অভিযুক্ত নারীর শাশুড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অভিযোগকারীর দাবি, তার পুত্রবধূ নিজের সন্তানকে বিক্রি করেছেন। পুলিশের তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্ত তরুণীর স্বামী রেল পুলিশ কর্তৃক চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন। জামিনের জন্য তার টাকা প্রয়োজন ছিল।
তরুণী তার স্বামীর নির্দেশে, সন্তান জন্মের পর নিজের ৪৫ দিনের শিশুকে কর্ণাটকের একটি পরিবারে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন।
পুলিশ জানায়, শিশুটি বিক্রির পরে তরুণীর হাতে নগদ ১ লাখ টাকা আসে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং শিশুটিকে উদ্ধার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়।
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়। উল্লাসনগর, সুরাত, ভদোদরা ও কর্ণাটকের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত আট দালালসহ ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শিশুটিকে উদ্ধার করে আপাতত পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে যারা কিনেছিল, তাদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
তদন্তে জানা গেছে, এই পাচার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এবং শিশু বিক্রির সঙ্গে জড়িত। অভিযোগ পাওয়া দালালদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এর আগেও এ ধরনের অপরাধে যুক্ত ছিলেন।
এই ঘটনা মানুষের মূল্যবোধ ও মানবাধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। একদিকে পরিবারে দারিদ্র্যের চাপ, অন্যদিকে আইনগত প্রক্রিয়ার ব্যয়—সবমিলিয়ে এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটছে।
শিশু বিক্রির এই ঘটনা যেমন সমাজের অন্ধকার দিককে তুলে ধরেছে, তেমনই পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ ও সচেতনতা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে।