২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বেরিয়ে যাবে, যা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সেবায় একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএইচও একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়েছে, যা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র তাদের সদস্যপদ প্রত্যাহারের নোটিশ দিয়েছে।
২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতিসংঘের কাছে পাঠানো চিঠিতে ডব্লিউএইচও থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর, গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্বভার গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডব্লিউএইচও থেকে মার্কিন সদস্যপদ প্রত্যাহারের নির্বাহী আদেশে সই করেন। এর ফলে, এক বছরের নোটিশের পর ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটির সদস্যপদ থেকে বেরিয়ে যাবে।
এছাড়া, ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে মার্কিন সরকারের কোনো অর্থ, সহায়তা বা সম্পদ ডব্লিউএইচওতে দেওয়া হবে না। তিনি মার্কিন সরকারের কর্মীদেরও ডব্লিউএইচওর সঙ্গে সংযুক্ত কোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে, সংস্থাটির মহামারি মোকাবিলা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে।
ডব্লিউএইচওর বর্তমান ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম বৃহত্তম আর্থিক সহায়তাকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা প্রায় ১৮ শতাংশ, যা সংস্থাটির কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ প্রত্যাহারের ফলে ডব্লিউএইচও তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তাকারী দেশকে হারাবে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভবিষ্যত কার্যক্রমের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বিশ্বের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট যেমন যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস, মহামারি মোকাবিলায় ডব্লিউএইচওর কার্যক্রমের ওপর এক বড় প্রভাব ফেলবে। এই সংকটগুলো মোকাবিলা করতে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ফলে সংস্থাটির মহামারি প্রতিরোধ, ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন, এবং অন্যান্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে সহায়তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে ডব্লিউএইচওর নেতৃত্বে বৈশ্বিক সহযোগিতা কার্যকরীভাবে কাজ করেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ প্রত্যাহারের ফলে বৈশ্বিক মহামারির প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব আরও জটিল হয়ে উঠবে।
এছাড়া, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে মূল ভূমিকা পালন করে এসেছে, তাদের অব্যাহতি ডব্লিউএইচওর আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যার প্রভাব বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কৌশল ও পরিকল্পনাগুলির ওপরও পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য পরিসরে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ের অভাব তৈরি করতে পারে, এবং ডব্লিউএইচওকে একটি শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল সহায়তাকারী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে।