সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার এক ঘণ্টার ‘কলমবিরতি’ কর্মসূচি পালন করেছেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজ নিজ দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। একইসঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধনের কর্মসূচি এবং ৪ জানুয়ারি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে প্রশাসনের সব পদ শুধুমাত্র তাঁদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। এ দাবিতে গত রোববার সচিবালয়ে একটি বড় জমায়েত হয়। এর প্রেক্ষিতে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ গঠিত ২৫টি ক্যাডার একত্রিত হয়ে কলমবিরতির কর্মসূচি পালন করেছে।
বর্তমানে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের দাবি, এই কোটাপদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হোক। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পদে প্রতিটি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিশেষ গাড়ি ও মাসিক ৫০ হাজার টাকার সংরক্ষণ ভাতা পান, যা অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য নেই। এসব সুবিধা সমান করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
১ সেপ্টেম্বর: ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গঠিত হয়। এরপর থেকে সংগঠনটি বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
২২ ডিসেম্বর: প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা শুরু করেন।
২৬ ডিসেম্বর: বিসিএস (পরিসংখ্যান), বিসিএস (তথ্য) প্রকৌশল ও অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা এক ঘণ্টার কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের মোট সংখ্যা যথাক্রমে ১৬ হাজার এবং ৩০ হাজারের বেশি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, তাঁদের ক্যাডারভুক্ত না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে গত সোমবার স্বাস্থ্য ক্যাডার জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা ক্যাডার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের দাবি উত্থাপন করে।
শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবি: শিক্ষাকে ক্যাডারের বাইরে রাখার পরিকল্পনা বাতিল। কোটা ব্যবস্থা বাদ দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি নিশ্চিত। মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পদে শিক্ষা ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা রাখার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে আলাদা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই সুপারিশের বিরোধিতা করে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা আন্দোলনে নামেন।
২৮ ডিসেম্বর: মানববন্ধন, ৩১ ডিসেম্বর: শিক্ষা ক্যাডারের প্রতিবাদ সভা, ৪ জানুয়ারি: সমাবেশ করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা।
আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রশ্নে চলমান আন্দোলন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে এই আন্দোলন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব সামাল দিতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সকল ক্যাডারের মধ্যে সাম্য নিশ্চিত করা এবং সিভিল সার্ভিসের কাজকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ এবং ন্যায্য সমাধান প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।