যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ইতোমধ্যে দাবানলে বিস্তীর্ণ এলাকা পুড়ে গেছে এবং এখন পর্যন্ত ১৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগুন লাগা পাহাড়গুলোতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া হচ্ছে এবং অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে দ্রুতগতির আগুনের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনার বা করোনারের কার্যালয় দাবানলের কারণে নিহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে তালিকায় নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় বা বিবরণ দেওয়া হয়নি।
নথিতে বলা হয়েছে, দাবানলের কারণে প্যালিসেডস ফায়ার জোনে ৫ জন এবং ইটন ফায়ার জোনে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিবিসি বলছে, প্যালিসেডসের অন্তত ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। মান্ডেভিলে ক্যানিয়ন পর্যন্ত আগুন ছড়িয়েছে। ফলে ব্রেন্টউডের বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই এলাকায় বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত ব্যক্তির বাড়ি রয়েছে, যাদের মধ্যে আছেন অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার, ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব ইগার এবং এনবিএ তারকা লেবরন জেমস।
এ ছাড়া যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরতে বলা হয়েছে, সেখানে গেটি সেন্টারও রয়েছে। এটি একটি হিলটপ মিউজিয়াম, যেখানে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিল্পকর্ম সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ভ্যান গঁগ, রুবেনস, মনেট ও ডেগাসের মূল্যবান শিল্পকর্মও রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই ভবনের কোনও ক্ষতি হয়নি।
প্যালিসেডসের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইটন এলাকায়। সেখানে প্রায় ১৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। তবে কেনেথ ও হার্স্ট এলাকায় ছোট দুটি দাবানল দমকল কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
দ্রুতগতির দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করলেও ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে পানি না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
আবহাওয়া বিভাগ শনিবার ও রোববার বাতাসের গতি বাড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যালিফোর্নিয়ার কাছাকাছি সাতটি রাজ্য, ফেডারেল সরকার, কানাডা এবং মেক্সিকো প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
দাবানলের কারণে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার অধিবাসীকে ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, তারা চাইলে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত দাবানলের কোনও নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে যে দুটি এলাকায় বড় ধরনের আগুন লেগেছে, তা এক করলে সেই আগুনের বিস্তৃতি নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের দ্বিগুণ হবে।