‘খামসিন’ নামক মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ৯টি আরব দেশে ভয়াবহ ধূলিঝড় আঘাত হেনেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষিতে পবিত্র নগরী মক্কা, তার আশেপাশের এলাকা ও সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সৌদি আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার (১ মে) কমলা সতর্কতা জারি করেছে। এই সতর্কতা হুশিয়ার করে দেয় যে, ঝড়ো হাওয়া, প্রবল বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মক্কা, জেদ্দা, তাইফ ও মিনা এলাকায় ৭০ কিমি গতির ঝড়ো হাওয়া এবং বিচ্ছিন্ন বজ্রসহ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টির ফলে রাস্তায় পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
২০২৫ সালের হজ মৌসুম শুরু হতে বাকি মাত্র ৪ সপ্তাহ। এর আগেই এমন প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে হজ সম্পর্কিত অবকাঠামো প্রস্তুতিতে বিলম্ব দেখা দিয়েছে। ধূলিঝড়ে বহু অস্থায়ী ক্যাম্প ও তাবু স্থাপনার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
মক্কার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বয়স্ক, শিশু ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য এই ধূলিঝড় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। শহরের হাসপাতালগুলোতে জরুরি পরিষেবা জোরদার করা হয়েছে এবং বিশেষ রেসপাইরেটরি ক্লিনিক খোলা হয়েছে।
খোলা মাঠভিত্তিক এলাকা মিনা ও আরাফাহ উপত্যকায় শিবির স্থাপনায় ধূলিঝড় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৌশল বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মিনার নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।
হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, আবহাওয়ার যেকোনো বিপর্যয় মোকাবিলায় তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। মসজিদুল হারামের ছাদ ও নিকাশী ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। বাহ্যিক প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। হাজীদের নিরাপত্তায় রিয়েল-টাইম আবহাওয়া নোটিফিকেশন চালু করা হয়েছে। ধূলিঝড়ের সময় খোলা জায়গায় না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে সৌদি আরবে এপ্রিল মাসে খামসিন ঝড় দেখা গেলেও গত কয়েক বছরে এর তীব্রতা বেড়েছে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বালু ও ধুলোর পরিমাণ ও বিস্তার বাড়ছে। যা ওমরাহ ও হজ মৌসুমে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
হজ মৌসুমের আগে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হজযাত্রী, প্রশাসন এবং সেবাদানকারীদের জন্য চরম চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে সরকারি প্রস্তুতি যথাযথ থাকলেও, বৈরী প্রকৃতি এক ধরনের সতর্কবার্তা দিচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ পবিত্র ভূমিকেও অনিরাপদ করে তুলছে।