ফিলিপাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তে সম্প্রতি এমন এক মন্তব্য করেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তিনি প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন, যদি তাকে হত্যা করা হয়, তবে প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোস, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী লিজা আরানেতা-মার্কোস এবং প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজকেও হত্যা করার জন্য একজন ঘাতককে চুক্তিবদ্ধ করেছেন। তার এই বক্তব্যের ফলে দেশটির দুই প্রধান রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিভাজন নতুন করে সামনে এসেছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে সারা দুতার্তে বলেন, “আমি একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাকে বলেছি, যদি আমাকে হত্যা করা হয়, তাহলে তুমি বংবং মার্কোস, ফার্স্ট লেডি লিজা আরানেতা এবং স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজকে হত্যা করবে। এটি তামাশা নয়, কোনো রসিকতা নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশ জাহান্নামে যাচ্ছে কারণ আমরা এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছি, যিনি জানেন না কীভাবে প্রেসিডেন্ট হতে হয়। আর তিনি মিথ্যাবাদী।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্ট মার্কোসকে অযোগ্য এবং মিথ্যাবাদী বলে আক্রমণ করেন।
সারা দুতার্তের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশনস অফিস থেকে এক বিবৃতি জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্টের এই হুমকির বিষয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি কমান্ডকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা আরও জানায়, প্রেসিডেন্টের জীবনের প্রতি যে কোনো হুমকিকে সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে। তবে সারা দুতার্তের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সারা দুতার্তে, যিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের কন্যা, প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোস এবং তার পরিবারকে প্রায়ই দুর্নীতি ও অযোগ্যতার জন্য সমালোচনা করে থাকেন। সম্প্রতি তার চিফ অফ স্টাফ জুলেইকা লোপেজকে আটক করা হলে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। লোপেজের বিরুদ্ধে বাজেট ব্যবহারে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় এবং তাকে মহিলা কারাগারে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে দুতার্তে সমর্থকরা ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সামরিক প্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাওনার একটি বিবৃতি জারি করে পরিস্থিতি শান্ত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ফিলিপাইনের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসামরিক কর্তৃত্বের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ থাকবে।” তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং বিভাজন সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান।
সারা দুতার্তের বক্তব্য ফিলিপাইনের দণ্ডবিধির অধীনে অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে পারে। তার এই হুমকির জন্য জেল এবং জরিমানার শাস্তি হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
সারা দুতার্তের এই মন্তব্য শুধু ফিলিপাইনের রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দুই রাজনৈতিক পরিবারের দ্বন্দ্ব এবং এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয়, এই সংকট কীভাবে সমাধান করা হয় এবং এর প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।