বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শীতলতা কাটিয়ে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ হিসেবে আজ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসছে দু’দেশ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সকালেই দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকের কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন, এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমেনা বালুচ, যিনি এরই মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রায় বরফাচ্ছন্ন ছিল। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের তরফ থেকে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের আগ্রহ দেখা দেয় এবং বাংলাদেশ তা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে।
এর ধারাবাহিকতায় গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে এবং ডিসেম্বরে মিসরে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে। এই উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের ফলস্বরূপ আজকের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও সহযোগিতা, আন্তঃসংযোগ বা কানেক্টিভিটি, প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতা, কৃষি ও অন্যান্য খাতে যৌথ উদ্যোগ।
তিনি বলেন, “দুদেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতোমধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, এই বৈঠক আমাদের জন্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। যদিও ভিসা, জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা অব্যাহত ছিল, ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিসা প্রদান কঠিন করা হলে পাকিস্তানও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। এরপর থেকেই রাজনৈতিক সম্পর্ক কার্যত অচলাবস্থায় ছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আজকের বৈঠক ইতিবাচক হলে শিগগিরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের পথ প্রশস্ত হবে। এটি হবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও সক্রিয় করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।