দেশে প্রথমবারের মতো ভোটারদের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই অপসারণ করার বিধান যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ) অধ্যাদেশে ‘রি-কল’ প্রথা অন্তর্ভুক্ত করতে চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
কমিশনের চূড়ান্ত করা খসড়ার ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘রি-কল’ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ভোটাররা তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে দিতে পারেন। এটি জনতার হাতে প্রতিনিধিদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি উপায়।
রি-কল পদ্ধতির প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করবে?
কোনো সদস্যকে রি-কল করতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে তাদের প্রাপ্ত মোট ভোটের এক শতাংশের বেশি ভোটারের স্বাক্ষর বা টিপসহি প্রয়োজন হবে।
এই দরখাস্ত নির্বাচন কমিশনে দাখিলের পর অনধিক এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় নিয়ম অনুসারে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।
রি-কল প্রস্তাব পাস হলে নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
বর্তমানে দেশের স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের (ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন রয়েছে। কমিশন সুপারিশ করেছে, গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে একটি একক আইনের আওতায় আনতে হবে। সেই অনুযায়ী এই অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
কমিশনের সদস্য ও সাবেক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহমান (জীবল) বলেন, “জনগণের ক্ষমতাকে মূল্যায়ন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির মধ্যে আনা এবং সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই রি-কল বিধান সংযোজন করা হয়েছে। সফলতা পেলে জাতীয় নির্বাচনেও এই বিধান প্রয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।”
রি-কল যেসব দেশে বিদ্যমান
যুক্তরাষ্ট্র: অনেক অঙ্গরাজ্যে গভর্নরসহ জনপ্রতিনিধিদের রি-কল করা যায়।
সুইজারল্যান্ড: কিছু ক্যান্টনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রি-কলের সুযোগ রয়েছে।
ভেনিজুয়েলা: ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের বিরুদ্ধে রি-কল প্রচেষ্টা হয়েছিল।
ভারত: মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়সহ কিছু রাজ্যে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের রি-কল করা যায়।
যদিও রি-কল ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রকে জবাবদিহিমূলক করার একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়, সমালোচকদের মতে এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অতি দ্রুত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানানো এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে।