1. hmonir19799@gmail.com : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. rtbdnews@gmail.com : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. info@www.rtbdnews.com : RT BD NEWS :
রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সোনার দাম বেড়ে ২২ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা সকল নাগরিকের সমান অধিকারের দাবি মাসুদ সাঈদীর খুলনায় আ. ন. ম. মুরাদের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা পিরোজপুরে ব্যবসায়ী হত্যায় ৬ জনের যাবজ্জীবন, ১ জনের দুই বছরের কারাদণ্ড আকু বিল পরিশোধে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশে পিরোজপুরে কৃষিক্ষেতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বৃদ্ধ কৃষকের মৃত্যু পিরোজপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে টিয়েন্স প্রতিষ্ঠানের ৫ জনের কারাদণ্ড কাউখালীতে জমজমাট ভাসমান হাটে আমন ধানের চারা বিক্রি পিরোজপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক বেঞ্চ ভাঙ্গারিতে বিক্রি ঝিনাইদহে জমি বিক্রির নামে ১৫ লাখ টাকা প্রতারণা, গৃহবধূ সর্বস্বান্ত

রিজার্ভ-রেমিট্যান্স-রপ্তানি বাড়লেও কেন স্থবির বাংলাদেশের অর্থনীতি?

প্রতিবেদকের নাম :
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
রেমিট্যান্স

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের বৈপরীত্য চোখে পড়ছে। একদিকে বৈদেশিক রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে চোখে পড়ার মতো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭.১৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.৬৩ শতাংশ বেশি। মার্চ মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৪ শতাংশ বেশি। এই পরিসংখ্যানগুলো অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলার কথা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু। প্রবৃদ্ধি কমছে, দারিদ্র্য বাড়ছে এবং শ্রমবাজার স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন ওঠে—তাহলে সমস্যা কোথায়?

বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতার প্রধান কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও উৎপাদনে স্থবিরতা। রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বা রপ্তানি আয় মূলত খরচ হচ্ছে ভোগের খাতে। ঘরবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্য ব্যয়, বা ব্যক্তিগত খরচে এই অর্থের ব্যবহার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা উৎপাদনশীল খাতে প্রবাহিত হচ্ছে না। ফলে এই অর্থ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, বাড়ছে না নতুন শিল্প বা প্রতিষ্ঠান। আবার রিজার্ভ ব্যবহৃত হচ্ছে আমদানি ব্যয় মেটাতে, যা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি উৎপাদনশীল অবদান রাখতে ব্যর্থ।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকিং খাতে সংকট। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে, কিন্তু সরকার বিপুল পরিমাণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে—এতে একদিকে বেসরকারি উদ্যোক্তারা তহবিল সংকটে পড়ছেন, অন্যদিকে বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে, ফলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৪.৩৩ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে বিনিয়োগ ছিল ৩৬০.৫ মিলিয়ন ডলার। এ ধরনের বিনিয়োগ হ্রাস দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধা তৈরি করছে।

অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। মানুষ আগের মতো ব্যয় করতে পারছে না, ফলে বাজারে চাহিদা কমে যাচ্ছে। আর চাহিদা কমে গেলে উৎপাদন বাড়ানোরও প্রয়োজন পড়ে না। এই চক্রে পড়ে অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অতি গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৫৮ লাখে। দারিদ্র্য হারও বাড়বে ২২.৯ শতাংশে।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকট যতটা না বৈদেশিক খাতে, তার চেয়েও বেশি অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে তিনটি বিষয়—বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান। এই তিনটি খাতে গতি না ফিরলে রেমিট্যান্স বা রপ্তানি আয় সাময়িক স্বস্তি দিতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

১. বিনিয়োগে আস্থার সংকট

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা ও ব্যবসাবান্ধব নীতির অভাবে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন—নিরাপত্তা, নীতির ধারাবাহিকতা এবং সরকারের প্রতি আস্থা না থাকলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কেউই করতে চায় না। তদুপরি, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সুদের হার অতিমাত্রায় বেশি, ফলে উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অর্থনীতির একটি মূলনীতি হলো: বিনিয়োগ বাড়লে উৎপাদন বাড়ে, উৎপাদন বাড়লে কর্মসংস্থান তৈরি হয়, আর কর্মসংস্থান বাড়লে মানুষের আয় বাড়ে—এই চক্রটাই এখন ভেঙে পড়েছে।

২. বিদেশি বিনিয়োগ কমার কারণ ও ফলাফল

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির একটি মূল উপাদান। অথচ ২০২৪-২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে FDI নেমে এসেছে মাত্র ১০৪.৩৩ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭০% কম। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এমন দেশে বিনিয়োগ করতে চান যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিচারিক স্বচ্ছতা এবং নিয়মনীতি নির্ধারিত ও পূর্বানুমেয় থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে—তিনটিরই ঘাটতি রয়েছে। বিনিয়োগ না এলে কর্মসংস্থান হয় না, ফলে আয় বাড়ে না, দারিদ্র্য কমে না।

৩. উৎপাদনে গতি ফেরানো: কৃষি ও শিল্প খাতে আধুনিকায়ন জরুরি

বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি ভিত্তি কৃষি। কিন্তু এখনো দেশের বেশিরভাগ কৃষি খাত প্রচলিত ও অনুৎপাদনশীল কায়িক শ্রমনির্ভর পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি, সংরক্ষণ প্রযুক্তি, এবং কৃষি অর্থনীতির ডিজিটালিকরণে যে বিনিয়োগ দরকার, তা এখনও হয়নি। একই অবস্থা রয়েছে শিল্প খাতেও। শ্রমনির্ভর তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে নতুন ও উদ্ভাবনী খাত—যেমন প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, কৃষি-প্রসেসিং ইত্যাদি—তেমনভাবে গড়ে উঠছে না। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এই খাতগুলিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

৪. কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ নতুন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এর একটি বড় কারণ হলো উৎপাদন খাতে স্থবিরতা এবং নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহযোগিতার ঘাটতি। আবার যেসব খাতে কিছুটা কর্মসংস্থান তৈরি হয়, সেখানে কর্মপরিবেশ, বেতন এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় অনেকেই কাজ ধরে রাখতে পারেন না। ফলে ‘অদৃশ্য বেকারত্ব’ বাড়ছে—যেখানে মানুষ কাজ করছে বটে, কিন্তু আয় তার টিকে থাকার মতো নয়।

৫. ব্যাংকিং খাতে সংস্কার প্রয়োজন

বর্তমানে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে ধার করছে, যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই সরকার ৩৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে। এই প্রবণতা বেসরকারি বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ‘ক্রাউডিং আউট’ নামক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করছে—যেখানে সরকারের চাপে বেসরকারি খাত পেছনে পড়ে যায়। এর প্রতিকার হিসেবে প্রয়োজন ব্যাংকিং খাতে সুদের হার যৌক্তিককরণ, ঋণের প্রাপ্যতা সহজীকরণ এবং ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে। বৈদেশিক খাতে কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে স্বল্পমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনা এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য নীতিগত সংস্কার গ্রহণ করা। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতা, ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারই হতে পারে অর্থনীতিকে আবারও গতিশীল করার মূল চাবিকাঠি।

রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ গুরুত্বপূর্ণ হলেও এগুলো অর্থনীতির উপরি উপাদান। মূল ভিত্তি হলো উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও জনআয়ের স্থিতিশীলতা। এই ভিত্তি মজবুত না হলে দারিদ্র্য কমবে না, প্রবৃদ্ধিও টেকসই হবে না।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট