বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা আমার দেশ-এর সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, দেশের প্রশাসনিক কাঠামো, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মধ্যে বিভিন্ন সময় শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হলেও বর্তমান সরকার গত পাঁচ মাসে কোনো উল্লেখযোগ্য শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) ময়মনসিংহের টাউন হলের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “আজকে যদি সরকার ক্ষমতায় এসে সঠিকভাবে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতো, তাহলে বাংলাদেশ আজ অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকতো এবং অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতো না।”
মাহমুদুর রহমান জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যেভাবে শেখ হাসিনা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন, সেভাবে যেন আর কোনো সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে। “আমরা ভারতের মতো কোনো বিদেশি শক্তিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে কুক্ষিগত করতে দিতে পারি না,” বলেন তিনি।
সেমিনারে মাহমুদুর রহমান সরকারের সাম্প্রতিক ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “গতকাল হঠাৎ করে সরকার সবকিছুর ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি মানুষের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ওপরও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।”
তিনি জানান, রেস্টুরেন্টের ভ্যাট পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা গরিব মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তিনি বলেন, “সব রেস্টুরেন্ট বড়লোকের জন্য নয়। গরিব মানুষও সেখানে খেতে যায়। রেস্টুরেন্টে ভ্যাট বাড়ানো মানে গরিব মানুষের খাবারের দামও বাড়িয়ে দেওয়া।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সরকার পোশাকের ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের পোশাক কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। একইভাবে ওষুধের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে মানুষের চিকিৎসা খরচও বেড়ে যাবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, তারা বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি সত্যিকার অর্থে বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করত, তাহলে গরিব মানুষের ওপর প্রভাব পড়বে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতো।”
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, “সরকারের উচিত ছিল এমনভাবে ভ্যাট বৃদ্ধি করা, যাতে গরিব মানুষের কষ্ট না বাড়ে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা ঘটেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা জনগণের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।”
মাহমুদুর রহমান সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির নীতির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, “বিপ্লবের চেতনা ধারণ করা মানে হলো অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। সেখানে গরিবের ওপর কর চাপিয়ে তাদের জীবিকা কঠিন করে তুললে সেটা বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে যায় না।”
তিনি বলেন, “সরকার যদি সত্যিই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতো, তাহলে করের হার বাড়ানোর আগে দেশের গরিব মানুষ কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতো।”
মাহমুদুর রহমান সরকারের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশের জনগণকে কষ্ট দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। গরিব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য করনীতি সংস্কার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি।”
তিনি বলেন, “জনগণের কষ্ট লাঘব করতে হলে সরকারকে অবশ্যই ভ্যাট বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও সচেতন হতে হবে।”
সেমিনারে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমাদের সবার উচিত জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকা। কোনো স্বৈরাচারী সরকার যেন জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু দেশের জন্য নয়, প্রবাসীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ধলু, কসার ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ কামাল ঢালী, মুক্তিযোদ্ধা আরমান হোসেন খান পান্নু এবং আব্দুস সালাম মোল্লা সহ স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতৃবৃন্দ।
উক্ত সেমিনারটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার একটি মঞ্চ হিসেবে পরিণত হয়।
মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যে উঠে এসেছে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক। শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার ব্যর্থতা এবং ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের জনগণের ওপর কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়ে সরকারের আরও সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। জনগণের অধিকার রক্ষায় এবং দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।