সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বুধবার রাতে। দুই দিন পরও এই আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এতে ভবনের ছয় তলা থেকে নয় তলা পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে সিসিটিভি ক্যামেরা, ফুটেজ, এবং ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) পুড়ে যাওয়ায় তদন্তকাজ জটিল হয়ে উঠেছে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে একসঙ্গে তিনটি স্থানে আগুন লাগার ঘটনায় সারাদেশে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে ৩০ ঘণ্টা ধরে সকল কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকার পরও কীভাবে একই সময়ে তিনটি স্থানে আগুন লাগল, সেটি তদন্তকারীদের জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের আটতলা থেকে পুড়ে যাওয়া একটি কুকুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই কুকুরটি কীভাবে আটতলায় উঠল, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। ফরেনসিক বিভাগে কুকুরটির মরদেহ পাঠানো হয়েছে, যাতে জানা যায় এর শরীরে কোনো বিষাক্ত পদার্থ ছিল কিনা।
অনেকের ধারণা, এটি কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হতে পারে। সম্প্রতি তিনটি মন্ত্রণালয়ের মেগা প্রকল্পের ফাইল তলব করায় কিছু অসন্তুষ্ট চক্রের স্বার্থে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অফিসগুলো থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে, তৃতীয় কোনো পক্ষ এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তা গোয়েন্দা নজরদারির ফাঁকফোকর খুঁজে বের করেছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আট সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ওসমান গণি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান, এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। শনিবার আবার বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। ভবনের ছয় তলা থেকে নয় তলা পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া সিসি ক্যামেরা এবং ডিভিআর-সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ করছে পুলিশের একটি টিম। তবে ঘটনাস্থলের সার্বিক অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত।
বেশ কয়েকবার সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তার কারণে মিছিল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ কিংবা অনুমতি ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বারবার সুপারিশ করা হলেও তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।
অগ্নিকাণ্ডের পর আটতলায় পাওয়া কুকুরের মরদেহ নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন উঠেছে। প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রিট ডগ সচিবালয়ের মতো স্থানে প্রবেশ করতে পারে না। সচিবালয়ের ভিতরে এই ধরনের কুকুরের উপস্থিতি সন্দেহজনক। কুকুরটি কিভাবে এত উচ্চতায় উঠল এবং এটি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, তা নিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে।
এই অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা সরকারের উচ্চতর তদন্ত কমিটির প্রধান কাজ। তাদের মতে, এটি যদি ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে, তবে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তাই ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া প্রতিটি আলামত এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।