ভারতে প্রতারণার নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার এক অভিনব প্রতারণা চক্র ধরা পড়েছে। এই চক্রটি অভিনব এক চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বহু মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছে। সম্প্রতি বিহারের নওয়াদা জেলার কাহুয়ারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চক্রটি এমন একটি স্ক্যাম চালাচ্ছিল, যা এর আগে কখনো শোনা যায়নি।
গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকরা নিজেদের ‘বেবি বার্থ সার্ভিস’ নামে একটি ভুয়া সংস্থার প্রতিনিধিরূপে পরিচয় দিত। তারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের যুবকদের ফোন করে চাকরির প্রস্তাব দিত। তাদের চাকরির প্রস্তাব ছিল চমকে দেওয়ার মতো—“সন্তানহীন নারীদের অন্তঃসত্ত্বা করতে হবে”।
চাকরিপ্রার্থীদের বলা হতো, যদি কোনো নারীকে অন্তঃসত্ত্বা করতে সক্ষম হন, তবে তাদের ৫ লাখ রুপি পুরস্কার দেওয়া হবে। আর যদি কাজ করতে ব্যর্থ হন, তবুও তাদের ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত সম্মানী দেওয়া হবে। এমন প্রলোভন দিয়ে তারা অনেককে ফাঁদে ফেলেছিল।
এই প্রলোভনমূলক চাকরির প্রস্তাব পেয়ে অনেকেই তাদের ফাঁদে পা দিতেন। প্রতারকরা চাকরিপ্রার্থীদের ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ বাবদ অর্থ জমা দিতে বলত। রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০ রুপি থেকে শুরু করে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত আদায় করা হতো।
পুলিশের মতে, চক্রটি বহু মানুষকে এই অভিনব কায়দায় প্রতারণা করেছে এবং বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি বিহারের নওয়াদা জেলার কাহুয়ারা গ্রামে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
নওয়াদা থানার পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই তিন যুবক বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ভুয়া চাকরির প্রলোভনে যোগাযোগ করতেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই প্রতারণা চক্রটি ‘বেবি বার্থ সার্ভিস’ নামে একটি ভুয়া সংস্থা খুলেছিল। তারা ওই সংস্থার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির প্রস্তাব দিত। এই প্রস্তাবগুলোতে তারা মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখাত।
পুলিশ জানায়, এই চক্রের ফাঁদে পড়ে কতজন মানুষ প্রতারিত হয়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নওয়াদা থানার উপপরিদর্শক বলেন, “আমরা এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। যারা এই চক্রের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এই চক্রের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তাও তদন্ত করা হচ্ছে।”
পুলিশের ধারণা, প্রতারকরা মানুষের অসচেতনতা ও অর্থলিপ্সা কাজে লাগিয়ে এই অভিনব স্ক্যামের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
তবে পুলিশের অভিযানে তিন প্রতারক গ্রেপ্তার হওয়ায় চক্রটি ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। তারা বলছে, অস্বাভাবিক ও প্রলোভনমূলক চাকরির প্রস্তাবে কেউ যেন প্রতারকদের ফাঁদে না পড়েন।
নওয়াদা থানার কর্মকর্তা বলেন, “কোনো প্রলোভনমূলক চাকরির প্রস্তাব পেলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করুন। নিজেদের তথ্য কাউকে শেয়ার করবেন না। এ ধরনের প্রলোভন থেকে সাবধান থাকতে হবে।”
ভারতের বিহারে ‘সন্তানহীন নারীদের অন্তঃসত্ত্বা করার চাকরি’ নামক অভিনব কায়দার একটি প্রতারণা চক্র ধরা পড়েছে। এই চক্রটি বহু মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল। তবে পুলিশের দ্রুত তৎপরতায় চক্রটি ভেঙে পড়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে অসচেতনতার সুযোগে সাইবার প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।