ঢাকা, ২৮ নভেম্বর: সারাদেশে চলমান বিশৃঙ্খলার পেছনে উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধনের কথা উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে এই ইন্ধনদাতাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় এখনো সেনাবাহিনীর কাছে নেই। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাসদর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল-স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের কারণে অনেক ঘটনা শেষ পর্যন্ত ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন কর্নেল ইন্তেখাব। তিনি জানান, সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের তথ্য জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার: গত দুই সপ্তাহে ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার: বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ১,৩২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হতাহত সেনাসদস্য: গত ২০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন অফিসার শহীদ হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া ৬৩টি বিভিন্ন ধরণের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যার মধ্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা: ১৬টি, সরকারি অফিস সংক্রান্ত: ১টি, রাজনৈতিক কোন্দল: ৬টি, অন্যান্য: ৪০টি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) বিরুদ্ধে পরিচালিত বিশেষ অভিযানের তথ্য তুলে ধরে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, এখন পর্যন্ত ১৭৯ জন কেএনএ সদস্য ও তাদের সহায়তাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে ৬০টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সেনাসদস্যদের হতাহত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এই অভিযানে ৭ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।
ইন্ধনদাতাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় এখনও পাওয়া না গেলেও কর্নেল ইন্তেখাব মনে করেন, এদের উদ্দেশ্য হলো দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা। তিনি বলেন, “তারা কী চায় সেটা আপনি-আমি সবাই জানি। এটি ব্যক্তিস্বার্থ বা সাংগঠনিক স্বার্থ হতে পারে। সাধারণ জনতার দায়িত্ব হলো ইন্ধনে প্ররোচিত না হওয়া।”
ছাত্রদের আন্দোলন এবং সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, “ছাত্ররাই দেশের পরিবর্তন এনেছে। তারা সাময়িকভাবে ডিরেইলড হয়ে গেলে শক্তি প্রয়োগের আগে আমাদের অনেক চিন্তা করতে হয়।” তিনি আরও জানান, সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য উৎস থেকে উস্কানি এলে তা যাচাই করার আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, “অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ত্যাগ ও কর্মদক্ষতার প্রশংসা করে দেশবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়।