বাংলাদেশের জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি একটি বড় দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে আসামি হিসেবে নাম এসেছে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির। এ মামলায় শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান, পরিচালক তিলাত শাহরিন, সাবেক আইএফআইসি ব্যাংক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং সিআইবি প্রতিবেদন ছাড়াই ৮৭ কোটি টাকার জমিকে কৃত্রিমভাবে ১২০০ কোটি টাকায় মূল্য দেখিয়ে বন্ড ইস্যু করেছেন। এই বন্ড বিক্রির মাধ্যমে, তারা শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের নামে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উত্তোলন করেছেন। এরপর এই অর্থ শ্রীপুর টাউনশিপের চলতি হিসাবে জমা হয়ে এবং দুইশ কোটি টাকা এফডিআরে পরিণত করা হয়, বাকি আটশ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, এরপর এই অর্থের মাধ্যমে ব্যাংকিং নিয়ম ভেঙে নগদে উত্তোলন এবং সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক)/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে নাম রয়েছে: শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড: ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান, পরিচালক তিলাত শাহরিন, আইএফআইসি ব্যাংক: সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এবং আরও অন্যান্য কর্মকর্তা। বিএসইসি: সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এবং সাবেক কমিশনার রুমানা ইসলাম, মিজানুর রহমান, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা: সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, শাহ মো. মঈনউদ্দিন, মো. রফিকুল ইসলাম, গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, মো. নুরুল হাসনাত, মনিতুর রহমান, মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, ধানমন্ডি শাখা: সাবেক ব্যবস্থাপক নাজিমুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক হোসাইন শাহ আলী, অন্যান্য: সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও নিমাই কুমার সাহা, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্রাঞ্চ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার আয়েশা সিদ্দিকা, সিলভিয়া চৌধুরী।
এই মামলা দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এতে নাম রয়েছে এমন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। দুদক এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে এবং শীঘ্রই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এই মামলার মাধ্যমে দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিং মোকাবিলায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ও আর্থিক খাতে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন এই ধরনের বড় দুর্নীতি মামলাগুলো প্রকাশ্যে আসে। দেশে আরও সঠিক আর্থিক পরিচালনা এবং দুর্নীতি দমন আইন কঠোরভাবে কার্যকর করার আহ্বান ওঠে। এতে সাধারণ মানুষের আস্থাও বাড়বে দেশের বিচার ব্যবস্থায় এবং ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের প্রতি।