ভারতের প্রখ্যাত সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিশতির উরস চলাকালীন রাজস্থানের আজমির শরীফ দরগায় চাদর পাঠিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য। মোদি ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দরগায় চাদর পাঠিয়ে আসছেন।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভারতের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এই চাদর আনুষ্ঠানিকভাবে আজমির শরীফ দরগায় তুলে দেন। এটি ছিল সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিশতির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বার্ষিক উরস উৎসবের অংশ।
১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীই আজমির শরীফ দরগায় চাদর পাঠানোর ঐতিহ্য অনুসরণ করেছেন। মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি বছর দরগায় চাদর পাঠিয়ে আসছেন, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
অল ইন্ডিয়া সুফি সাজ্জাদানশীন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং আজমির দরগার উত্তরসূরি সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতি মোদির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদির চাদর পাঠানো ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীর বার্তা বহন করে। এটি সংহতি, উন্নয়ন, বিশ্বাস এবং সকলের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।”
সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতি আরও বলেন, “যারা ধর্মের নামে বিভেদ ছড়াতে চায়, তাদের কাছে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা। এটি ভারতের মিলিত ঐতিহ্য এবং সম্মিলিত সম্প্রীতির পুনঃনিশ্চয়তা।”
আজমির শরীফ দরগা ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ সুফি ধর্মীয় স্থান। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ ভক্ত এই দরগা পরিদর্শন করেন। খাজা মইনুদ্দিন চিশতির বার্ষিক উরস উৎসবে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।
উরস উদযাপনকালে প্রধানমন্ত্রীর চাদর পাঠানো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভক্তরা এই উৎসবকে সম্মিলিত সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন।
এদিকে, আজমির শরীফ দরগা নিয়ে ধর্মীয় বিতর্কও রয়েছে। ভারতের হিন্দুসেনা নামের একটি সংগঠন দাবি করেছে যে, দরগার বর্তমান স্থানে একটি প্রাচীন শিব মন্দির ছিল। এই দাবি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
হিন্দুসেনার প্রধান বিষ্ণু গুপ্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি লিখে দরগায় বার্ষিক উরস উৎসবে চাদর না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে মোদি সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রতি বছরের মতো এবারও দরগায় চাদর পাঠান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদির এই চাদর পাঠানো পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শুধু ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা নয়, বরং ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
মোদির এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক মহলে ইতিবাচক আলোচনা চলছে। যদিও কিছু গোষ্ঠী এটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে, তবে বেশিরভাগ বিশ্লেষকই মনে করছেন এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐক্যের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতি বলেন, “এটি শুধু চাদর পাঠানোর ঘটনা নয়। এটি ভারতের দীর্ঘস্থায়ী ঐক্যের প্রতীক। বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে মিলেমিশে বসবাস করুক, সেটাই আমাদের কাম্য।”
মোদির এই পদক্ষেপ ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে থেকে সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আজমির শরীফ দরগায় চাদর পাঠানোর পদক্ষেপ ভারতের ঐতিহ্য, সম্প্রীতি ও সাম্প্রদায়িক সহনশীলতার একটি অনন্য উদাহরণ। ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়ে মোদি ভারতের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন।