বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে একটি সম্ভাব্য দলীয় পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা-কে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে তার ঘনিষ্ঠদেরও বাদ দিয়ে একটি ‘পরিচ্ছন্ন’ ভাবমূর্তির নেতৃত্বে নতুন আওয়ামী লীগ গঠনের পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে এবং শেখ পরিবারের সদস্যদের এক প্রকার কোণঠাসা করে, কিছু পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীকে সামনে রেখে ‘নব্য আওয়ামী লীগ’ বা ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’-এর নামে একটি রাজনৈতিক শক্তি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান।
আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এই পরিকল্পনাকে সরাসরি ‘দল ধ্বংসের চক্রান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়, “২০০৬ সালেও শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে দল পুনর্গঠনের চেষ্টা হয়েছিল। তা ব্যর্থ হয়েছে। এবারও তাই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে শুধু রাজনৈতিক নেত্রী নন, দলের আত্মার প্রতীক। কর্মীদের কাছে শেখ পরিবারের প্রতি রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এই পরিবার ছাড়া আওয়ামী লীগ কল্পনা করা যায় না।”
জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতা ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লা তার এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ় জামান তাদের একটি একান্ত বৈঠকে বলেন— পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কয়েকজন নেতা, যেমন ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, শেখ ফজলে নূর তাপস, এবং সাবের হোসেন চৌধুরী-এর নেতৃত্বে একটি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নির্বাচনে অংশ নিলে, সেটিকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা হবে।
হাসনাত লেখেন, এই ‘নতুন নেতৃত্ব’ এপ্রিল-মে মাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেবে এবং শেখ হাসিনার পরিবারকে দায়ী করে তাদের থেকে আলাদা হবে—এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনসম্মুখে আসবে।
ভারতের কূটনীতিকদের একটি অংশ মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ ভারতের জন্য সুখকর হবে না। এক সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, “আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের আস্থাভাজন। যদি তা পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠদের হাতে চলে যায়, সেটা ভারতের জন্য বিপর্যয়কর হবে।”
খবরে আরও উঠে এসেছে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আওয়ামী লীগের একটি অংশ দাবি করছে, শেখ হাসিনাকে জোর করে বিমানে তুলে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, এবং তাকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করা হয়েছে।
কলকাতায় অবস্থানরত এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে এই ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, “বিভিন্ন নেতাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।”
আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নিচুতলার কর্মীদের সক্রিয় রাখছে। ইতোমধ্যে ২৩টি জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা, যেখানে তিনি সরাসরি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি দেশ ছাড়তে চাইনি। ইস্তফাও দিইনি। আমাকে জোর করে দেশছাড়া করা হয়েছে। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
তিনি আরও বলেন, “এদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। আমি ফিরে আসব এবং কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার বিচার করব।”
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান ঘিরে রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা ও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা। শেখ হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ কতটা কার্যকর হতে পারে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সন্দিহান। অন্যদিকে, দলের তৃণমূল কর্মীদের প্রেরণার উৎস হিসেবে শেখ হাসিনার উপস্থিতি যে এখনো গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রমাণ মিলছে প্রতিটি ভার্চুয়াল বৈঠকে।
বাংলাদেশে সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা স্পষ্ট, রাজনৈতিক মঞ্চে আবারও অস্থিরতা ও পুনঃগঠনের ছায়া ঘনিয়ে এসেছে।