দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে বড় পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। চীন পাকিস্তানকে ৪০টি পঞ্চম প্রজন্মের জে-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে যাচ্ছে। এই চুক্তি কার্যকর হলে পাকিস্তান স্টেলথ প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের কাতারে চলে আসবে।
এদিকে, ভারত এখনও নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি স্টেলথ যুদ্ধবিমান এএমসিএ প্রকল্পে রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে, যা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে অন্তত এক দশক।
পাকিস্তান যে জে-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে, তা মূলত রপ্তানিযোগ্য সংস্করণ এফসি-৩১, যা চীনের নৌবাহিনীতে ব্যবহৃত আসল সংস্করণের কিছুটা কম ক্ষমতাসম্পন্ন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) অজয় আহলাওয়াত বলেন, “পাকিস্তানি পাইলটরা ইতিমধ্যেই চীনে ছয় মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জে-৩৫-এর আগমন অপ্রত্যাশিত নয়, তবে ডেলিভারির সময়টা কিছুটা আগে হয়ে যাচ্ছে, সেটাই বিস্ময়ের।”
ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এখনও কোনো স্টেলথ ফাইটার জেট নেই। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এএমসিএ (Advanced Medium Combat Aircraft) প্রকল্পের প্রোটোটাইপ ২০২৮-২৯ সালে তৈরি হওয়ার কথা। পরিপূর্ণভাবে পরিষেবায় আসতে সময় লাগবে ২০৩৫ পর্যন্ত।
আহলাওয়াত বলেন, “জে-৩৫ হাতে আসলে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে প্রযুক্তিগত ব্যবধান কমে আসবে। ভারতের আধুনিকতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা হুমকির মুখে পড়বে।”
এয়ার মার্শাল (অব.) সঞ্জীব কাপুর বলেন, “আমাদের হাতে এখন দুটি অপশন—সুখোই-৫৭ বা এফ-৩৫। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সুখোই-৫৭ কেনা যেতে পারে রাশিয়ার থেকে। এতে ট্রান্সফার অব টেকনোলজি ও অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সুবিধা মিলতে পারে।” তবে এই প্রস্তাবে আহলাওয়াত দ্বিমত পোষণ করে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে রাশিয়ার সুখোই-৫৭ প্রকল্পে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছি, তবুও সন্তুষ্ট হইনি। এখন আমাদের উচিত এএমসিএ-এর উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।”
এএমসিএ প্রকল্প ভারতীয় অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) এবং ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে। কাপুর বলেন, “আমরা যদি ৯-১০ বছর অপেক্ষা করি, তবে আমাদের চারপাশের প্রতিদ্বন্দ্বীরা আরও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হবে। এই গ্যাপ পূরণে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
পাকিস্তানের হাতে জে-৩৫ এলে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত না নিলে স্টেলথ যুদ্ধবিমানে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে একধাপ এগিয়ে যাবে। ভারতের পক্ষে একমাত্র টেকসই সমাধান হচ্ছে—জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে এএমসিএ প্রকল্পে বিনিয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।