1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বিশ্বজুড়ে বাজেট সংকটে ১ কোটির বেশি শরণার্থী ঝুঁকিতে: জাতিসংঘের সতর্কতা চূড়ান্ত সংগ্রামের রুপরেখা দিয়েছেন তারেক রহমান: রিজভী সৌদি আরবে যেসব পণ্য মুদির দোকানে বিক্রি নিষিদ্ধ! ইন্দুরকানীতে সিএনজির ধাক্কায় বৃদ্ধ পান ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঝিনাইদহে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই স্মরণে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে প্রতীকী ম্যারাথন অনুষ্ঠিত জর্ডান কক্সের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ১১ ছক্কা ও ১১ চারে রেকর্ড গড়া ১৩৯ রংপুরে ‘অর্জন’ ভাস্কর্যে শেখ মুজিবের ছবি মুছে দিলেন শিক্ষার্থীরা ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষে মঠবাড়িয়ায় প্রাণ গেল মুবিনের

বিভ্রান্তির ছায়ায় বিএনপি: নেতৃত্বের দ্বৈততা, ষড়যন্ত্রের বয়ান ও হারানো গণসম্পৃক্ততার অ্যালার্ম

তাজুল ইসলাম
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
বিএনপি

বাংলাদেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দল বিএনপি বর্তমানে এক জটিল ও সংকটপূর্ণ অবস্থানে দাঁড়িয়ে। দেশের বিভিন্ন ঘটনা ও বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, প্রতিক্রিয়া ও করণীয়গুলো গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ‘গণমানুষের পক্ষে’ দাবি করলেও সাম্প্রতিক কার্যক্রম ও বিবৃতি থেকে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে—সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

গত ১৪ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একাধিক সমাবেশ, বিবৃতি ও বক্তব্যের সারমর্ম বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টভাবে একটি বিষয় সামনে আসে—দলীয় কৌশলে দ্বিধা, নেতৃত্বে বিভ্রান্তি এবং অপসাংগঠনিক আচরণের স্পষ্ট প্রতিফলন। এই বিশ্লেষণে চেষ্টা করব তা-ই তুলে ধরতে, গঠনমূলক সমালোচনার আলোকে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাধিক বক্তব্যে দাবি করেছেন, সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য হত্যা এবং মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড—all of these—মূলত বিএনপিকে বিপাকে ফেলতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের অংশ।

তিনি আরও বলেন, একটি ইসলামিক দল এসব ষড়যন্ত্রে জড়িত, যারা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামীপন্থী ও পার্শ্ববর্তী দেশের ঘনিষ্ঠ। প্রশ্ন হলো, বারবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে কি বিএনপি বাস্তব রাজনৈতিক মূল্যায়ন এড়িয়ে যাচ্ছে না? কোনো ঘটনার মূল সত্য উদঘাটনের বদলে একে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে দলটি তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতাকে কি আড়াল করতে চাচ্ছে?

একটি প্রশ্নের উত্তর সাধারণ জনগণ খুঁজছে: আপনারা যদি ষড়যন্ত্রের শিকারই হন, তবে কি আপনারা এখনো সে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার মতো সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত? এ প্রশ্নে নেতৃবৃন্দের নিশ্চুপতা বা আবেগময় বক্তৃতা দিয়ে দায়সারা রাজনৈতিক কর্মসূচি জনগণকে আর আকর্ষণ করছে না।

একই দিনে, একাধিক ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। রিজভী আহমেদ যেখানে তারেক রহমানকে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন, সেখানে শামসুজ্জামান দুদু সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডকে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, আবার জয়নুল আবদিন ফারুক বক্তব্যে সরকারি সহযোগী কিছু শক্তির ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন।

এই ভিন্ন ভিন্ন কণ্ঠে একটিই প্রশ্ন উঠে আসে—দলীয় অবস্থান আসলে কী? বিএনপির কোনো “কেন্দ্রীয় বার্তা” বা সুসংগঠিত “message control” আজ চোখে পড়ে না। জনগণের দৃষ্টিতে এটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—বিএনপি এখন ‘leaderless’ নয়, কিন্তু ‘directionless’।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বলছেন—“বিএনপির কেউ জড়িত থাকলেও দলে আজীবন বহিষ্কৃত করা হয়েছে।” আবার অন্যদিকে দাবি করছেন, “কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই”। তাহলে প্রশ্ন আসে, বহিষ্কার করলেন কেন? যদি সংশ্লিষ্টতা না থাকে, তাহলে বহিষ্কার সিদ্ধান্ত দলীয় স্বেচ্ছাচারিতা নাকি আতঙ্কে আত্মরক্ষা?

এরপর দল থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা—প্রশ্ন হলো, এটি কি সত্য উদঘাটনের জন্য, নাকি রাজনৈতিক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ? এখানে প্রয়োজন ছিল একটি দৃঢ়, একক বক্তব্য—যেটা জাতিকে বার্তা দিত, “আমরা জবাবদিহি ও সত্য উন্মোচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” কিন্তু বাস্তবে পাওয়া গেছে দ্বৈততা ও কূটনৈতিক ভাষায় আবর্তিত অস্পষ্টতা।

প্রত্যেক বক্তা তারেক রহমানকে গণতন্ত্রের পথিকৃৎ বলে অভিহিত করছেন, তবে এ দাবির পেছনে যদি দল নিজেই গণতান্ত্রিক আচরণ না করে, তখন তা becomes a hollow slogan.

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের অভিযোগ যেভাবে সামনে এসেছে, তাতে করে তারেক রহমানের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে বলছেন, “৫-৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে”, আবার এই একই অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে বারবার। এর মানে হলো—ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি বা নেতাকর্মীরা দলীয় শৃঙ্খলাকে ভয় পায় না।

জনগণ এখন আর “ষড়যন্ত্র” বা “আন্তর্জাতিক অপচেষ্টা” তত্ত্বে তেমন আগ্রহী নয়। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—আমার পকেটে দামি চাল, ডিম, গ্যাস, নিরাপত্তাহীনতা, কর্মসংস্থানহীনতা কিভাবে বিএনপি সমাধান দেবে? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির উত্তর নেই। নেই কোনো জনমুখী ইশতেহার, নেই যুবকদের কাছে টানার বাস্তব প্ল্যান।জনগণকে ছোটো করে দেখলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। একে চর্চা করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়।

বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির বক্তব্যে বারবার ‘অশ্লীল শব্দ’, ‘ঘৃণা-উগড়ে দেওয়া’ কিংবা ‘অপরের ওপর দোষ চাপানো’র প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে আজ রাজনৈতিক ভাষা হয়ে উঠেছে শালীনতা, তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও মানবিক বোধের বাহন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত “অবমাননাকর কনটেন্ট”—যা রিজভী আহমেদ উল্লেখ করেছেন—সেটিও হয়তো একটি বাস্তবতা, কিন্তু দলীয় নিয়ন্ত্রণের অভাবে এসব বার্তাই বিএনপির মূল বার্তা হয়ে উঠছে—যা তাদের ভাবমূর্তি আরও ধ্বংস করছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডার কথা বলা হলেও দলীয় কাঠামোয় তিনি একচ্ছত্র নেতৃত্বের অধিকারী হয়ে উঠেছেন। প্রবাসে বসে দল পরিচালনার এই পদ্ধতিকে মেনে নিতে পারছে না অনেক নেতাকর্মী, যদিও প্রকাশ্যে কেউ বলছে না। প্রশ্ন হলো—যিনি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেতে চান, তার কি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রমাণ এখনো জনগণের কাছে রয়েছে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির অস্তিত্ব একদিন ছিল শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প শক্তি হিসেবে। কিন্তু আজ তারা এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সামনে জাতীয় নির্বাচন—আর পেছনে ইতিহাসের একগুচ্ছ অমীমাংসিত প্রশ্ন, নেতৃত্বের বিভ্রান্তি, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনসম্পৃক্ততা হারানোর উদ্বেগ। বিএনপি আজ একটি crossroads-এ। এই মুহূর্তে দলটির সামনে কিছু মৌলিক কাজ জরুরি না করলে, তারা রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা পুরোপুরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

এই সংকট থেকে উত্তরণে বিএনপিকে করতে হবে পাঁচটি মৌলিক কাজ

কোনো দল যদি আজও “ষড়যন্ত্র” ও “অন্তর্ঘাতের শিকার” তত্ত্বে আটকে থাকে, তবে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন সম্ভব নয়। জনগণ জানতে চায়—“আপনি কী করবেন?” দলটির উচিত হবে এককথায় পরিষ্কারভাবে বলা, তারা কেমন রাষ্ট্র, কেমন সমাজ ও অর্থনীতি গড়তে চায়।

বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতা একেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষ শুধু বিভ্রান্তই হচ্ছে না, বরং দলটির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। যে দলে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ, জবাবদিহি ও কমান্ড লাইন দুর্বল, সেই দল বৃহৎ দেশ পরিচালনায় সক্ষম—এই ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি হয় না।

প্রচলিত “বক্তৃতা নির্ভর” রাজনীতির দিন শেষ। আজকের প্রজন্ম চায় তথ্যনির্ভর, যুক্তিনির্ভর এবং বাস্তববাদী কৌশল। বিএনপির উচিত হবে ইমোশনাল স্লোগানের বদলে ডাটা, উদাহরণ ও সমাধানভিত্তিক ভাষা ব্যবহার করা, যাতে নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করা যায়।

একটি শক্তিশালী ও বিশদ ইশতেহার ছাড়া কোনো দলই আগামী দিনের নেতৃত্ব দাবি করতে পারে না।
জনগণ জানতে চায়— কর্মসংস্থান কিভাবে সৃষ্টি করবেন? শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কার করবেন কিভাবে? দুর্নীতির বিরুদ্ধে দল কী ভূমিকা নেবে? বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা বা ডিজিটাল অধিকার—এইসব বিষয়ে কী রূপরেখা আছে? বিএনপির ইশতেহার হওয়া উচিত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সময়োপযোগী এবং পরিমিতিশীল।

এককেন্দ্রিক দল পরিচালনার সংস্কৃতি দলের মধ্যকার উদ্যোগ ও মতবিনিময় প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে। তারেক রহমান হয়তো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, কিন্তু দলীয় পরামর্শে উন্মুক্ত মঞ্চ ও নীতিগত মতভিন্নতা সৃষ্টির সুযোগ না থাকলে একটি রাজনৈতিক দল দ্রুত বদ্ধঘর সংস্কৃতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত—বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি, সংলাপের সংস্কৃতি চালু, ও বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাস স্থাপন করা।

একটি শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র কখনোই টেকসই হয় না। বিএনপি যদি সত্যিই এই রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে নিজেদের মধ্যে আত্মসমালোচনা, গঠনমূলক সংস্কার ও জনসম্পৃক্ততার পুনর্গঠন আবশ্যক।

নতুন নেতৃত্বে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে না পারলে, বিএনপি ইতিহাসে নাম লেখাবে আরেকটি হারিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক সুযোগের দল হিসেবে—যাদের সময় ছিল, সুযোগ ছিল, কিন্তু সদ্ব্যবহার ছিল না।

এখন সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার—আপনারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করবেন, নাকি জনগণের জন্য?

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট