এক সময় মাল্টা চাষ ছিল শুধুমাত্র বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের সীমাবদ্ধ। তবে এখন সেই ধারা ভেঙে সমতল ভূমিতেও মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। পিরোজপুর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে কৃষকরা যেমন ভালো ফলন পাচ্ছেন, তেমনি বাড়ছে এ ফলের বাজারজাতকরণ ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা।
জানা যায়, চলতি বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলা ও নাজিরপুর উপজেলায় মাল্টা চাষ বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগের লক্ষ্য, এ মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার ২শ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হবে। এ মাল্টা স্থানীয়ভাবে “পয়সা মাল্টা” নামে পরিচিত বারি মাল্টা-১ প্রজাতির। ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে কমলা রঙ ধারণ করে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক সরাসরি মাল্টা চাষে যুক্ত আছেন।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মো. রেজাউল হাসান জানান, “এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২শ মেট্রিক টন। আশা করা যায়, আমরা এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। পিরোজপুরের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পিরোজপুরে মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সদর ও নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে মাল্টা আহরণ, বাছাই ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় চাষি শুসান্ত কুমার জানান, তার পাঁচ বিঘা জমির বাগানে এ বছর গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৬ মণ মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। তবে বাজারদর কম থাকায় আশানুরূপ লাভ না হলেও তিনি ফলন নিয়ে সন্তুষ্ট।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর পিরোজপুরে প্রায় ৩১ কোটি টাকার মাল্টা ব্যবসা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ জেলায় মাল্টা চাষের আরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এখানকার মাটি প্রধানত এটেল, দোআঁশ ও বেলে ধরনের, যা মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পাশাপাশি উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পিরোজপুরের মাল্টা আমদানিকৃত মাল্টার তুলনায় বেশি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
পিরোজপুরে মাল্টা এখন শুধু মৌসুমি ফল নয়, বরং লাভজনক বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে কৃষকদের জীবিকা পরিবর্তনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।