
জামালপুরে এসিড মেশানো ঘাস ও পানি খেয়ে হেকমত আলী নামের এক কৃষকের ৪টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও ৮টি গরু। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবারটি। একই ঘটনায় স্থানীয়দের হাঁস, মুরগি ও ছাগলও মারা গেছে।
সংবাদ পেয়ে নরুন্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সজিবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে দুপুরে সংশ্লিষ্ট কারখানার ১৯ জন কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের সীমান্তবর্তী তুলশিরচর ইউনিয়নের ডিগ্রীরচর এলাকায় একটি পুরাতন ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা গড়ে তোলা হয়। কোনো ধরনের পরিবেশগত ছাড়পত্র বা পরিকল্পনা ছাড়াই ‘বালুখোর আপেল’-এর সহযোগিতায় শেরপুরের লিখন নামের ব্যক্তি এই কারখানা চালু করেন।
সেখানে পুরনো অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানের ব্যাটারি ক্রয় করে তার বিষাক্ত সিসা ও অ্যাসিড পুনর্ব্যবহার করা হয়। বর্জ্য পদার্থগুলো স্থানীয় ফসলি জমি ও ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলা হয়। এর ফলে আশপাশের কৃষিজমি, জনস্বাস্থ্য ও বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
মির্জাপুর গ্রামের মৃত নিজামের ছেলে হেকমত আলী ভুমিহীন হওয়ায় প্রায় ৩০ বছর আগে স্ত্রীর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কৃষিকাজ ও গরুর দুধ বিক্রি করে দুই মেয়ে ভাবনা ও লিমার পড়ালেখার খরচ চালাতেন তিনি।
কিন্তু বুধবার সকালে মাঠে চরানো গরুগুলো ঘাস খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৪টি গরু মারা যায়, বাকি গরুগুলো চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কৃষকের মেয়ে ভাবনা ও লিমা বলেন, “আমাদের কোনো জমি নেই। গরুগুলোই ছিল একমাত্র ভরসা। সব শেষ হয়ে গেল, এখন আমরা কী করব?”
ময়মনসিংহ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুলাইমান সরকার বলেন, “জামালপুর মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিয়েছে। আমি গিয়ে ৪টি গরুকে মৃত পাই এবং অন্যান্য গরু চিকিৎসাধীন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার বর্জ্য থেকে বিষাক্ত পদার্থ পানিতে মিশে গিয়ে এই প্রাণহানি ঘটেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু গবাদি পশুর নয়, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি।”
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে নরুন্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সজিবকে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।