ঢাকা, ২১ নভেম্বর: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের যে স্বপ্ন নিয়ে রাষ্ট্রকে স্বাধীন করেছিলেন, আমি তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ।” বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা সেনানিবাসে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা এখন থেকে বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণই হবে সকল ক্ষমতার মালিক।” তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। নতুন এই দেশে সবাইকে সমান মর্যাদায় এক বৃহত্তর পরিবারের অংশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা করেন তিনি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “বিশ্ব দরবারে মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে পারস্পরিক সম্মান, আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করব।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সশস্ত্র বাহিনী দেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়।” তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে। তাদের অসামান্য অবদান আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।”
তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর মতো দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে শত্রু জাহাজ ধ্বংস করে। বিমান বাহিনীর ‘কিলো ফ্লাইট’ পাকিস্তানি সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণার্থে যা কিছু প্রয়োজন তা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা একটি মহৎ প্রচেষ্টা। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের গৌরবময় অতীতকে আরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এমন একটি বাংলাদেশ গড়া, যা বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠবে। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগিয়ে আমরা একটি সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনকালে ড. ইউনূস মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আমি মহান আল্লাহর কাছে আমাদের বীর শহিদদের মাগফিরাত কামনা করি এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”