ময়মনসিংহ নগরের টাউন হলের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারদের আর্থিক সহায়তা বিতরণ অনুষ্ঠানে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সারজিস আলম। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শহীদদের স্বপ্ন রক্ষা এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা দমন নিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে নিহত ৫৫ শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সারজিস আলম বলেন,
“খুনি হাসিনা ও তার দোসরেরা আমাদের ব্যর্থ করতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ব্যর্থ হলে তাদের কোনো শহীদ পরিবারের অস্তিত্ব রাখবে না।”
তিনি আরও বলেন,
“কালো শকুনদের চক্রান্ত থেমে নেই। শহীদ পরিবার বা আহতদের দুর্দশায় জীবনযাপন করতে দেওয়া হবে না। আমাদের সবার দায়িত্ব অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখা। যারা প্রশাসনের দায়িত্বে আছেন, তাদের এই অভ্যুত্থানের কারণেই আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হয়েছে। তাই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে এবং হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
সারজিস আলম উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে বলেন,
“কেউ যদি ধর্মকে ব্যবহার করে উগ্র সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপে জড়ায়, সেটা ইসকনের মতো কোনো উগ্র সংগঠন হোক বা অন্য ধর্মের, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় সোচ্চার থাকবে।”
তিনি আরও বলেন,
“দেশে যে কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি আমরা বারবার জানিয়েছি।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. ইউসুফ আলী। তিনি শহীদ পরিবারদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন এবং অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) মোহাম্মদ শরিফুর রহমান বলেন,
“দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং শহীদদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।”
অন্য বক্তারা অভ্যুত্থানের শহীদদের ত্যাগ এবং বর্তমান প্রজন্মের জন্য তা স্মরণীয় করে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। এছাড়া বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শামীম হোসেন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি চিকিৎসা কর্মকর্তা তুবাউল জান্নান, এবং শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন।
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা দেশের উগ্রবাদী ও সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ রোধে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।