চলতি বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে আগামী বছর ২ মার্চের পর, ২০২৬ সালের ভোটার তালিকার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করবে কমিশন।
গতকাল সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, বর্তমানে ১৭ লাখ ব্যক্তির তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে, যা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি সন্নিবেশ করা হবে। এরা নতুন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হবে। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এই ডেটা সবসময় পূর্ণাঙ্গ হয় না। কারণ অনেকেই অফিসে এসে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন না।
নির্বাচন কমিশনের হাতে বর্তমানে ১৭ লাখ ব্যক্তির তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ লাখ তথ্য ২০২২ সালে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং মাত্র ৪ লাখ ব্যক্তি বিভিন্ন অফিসে এসে এই বছর ভোটার নিবন্ধন করেছেন। তবে কমিশনের ধারণা অনুযায়ী, প্রায় ২৭ থেকে ২৮ লাখ ভোটার রয়েছেন যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হলেও এখনও নিবন্ধিত হননি।
কমিশনার জানান, এই বছরের হালনাগাদ কার্যক্রম ২ জানুয়ারি খসড়া প্রকাশের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে ২ মার্চ ২০২৫ সালে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে বাদ পড়া ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
নির্বাচন কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করবে। এ উদ্যোগে বাদ পড়া ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ ভোটারদের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।
কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তালিকাটি আরও নির্ভুল করা সম্ভব হবে। মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়া, ডুপ্লিকেশন শনাক্তকরণ এবং অন্যান্য ত্রুটি সংশোধন করা সহজ হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে এটি চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নয়।
কমিশনের উদ্দেশ্য হলো একটি শুদ্ধ এবং পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা তৈরি করা। এজন্য শতভাগ সঠিকতা নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচন সামনে এলে তপসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিশেষ সুযোগ রাখার জন্য বিশেষ কোনো অর্ডিন্যান্স জারির প্রস্তাবও করা হবে।
বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের নির্ধারিত সময়সীমা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কমিশনের সচিবালয় থেকে বিস্তারিত ব্রিফিং দেওয়া হবে। তবে কমিশনের ইচ্ছা, কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা।
একই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান কমিশনার। তবে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপের কোনো বিরোধ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ একটি সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।