1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সারা দেশে টানা বৃষ্টি, বাড়ছে অতি ভারি বর্ষণের শঙ্কা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ কালীগঞ্জে শতবর্ষী গাছ উপড়ে ভবনের উপর, আগুনে আহত ১ আগামীকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা’ ঘোষণা নেছারাবাদের শতবর্ষী পেয়ারা বাগানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য: লাউডস্পিকার জব্দ দিনাজপুরের কাহারোলে নিষিদ্ধ ঘোষিত দুই ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার জামালপুরে যুবসমাজের প্রতিবাদ—শুভ পাঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি খুলনার দিঘলিয়ায় ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা, প্রাক্তন স্বামীর ওপর সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টেক্সওয়ার্ল্ড অ্যাপারেল মেলা ২০২৫-এ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনের প্রদর্শনী দেখাল ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯

“কংস নদীর কান্না: ইতিহাস, দখলদারিত্ব ও পুনর্জাগরণের আহ্বান”

বি এম তাজুল
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
"কংস নদীর কান্না: ইতিহাস, দখলদারিত্ব ও পুনর্জাগরণের আহ্বান"

কংস নদী (কংসবতী বা কংসাই) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা এবং সুনামগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি সর্পিল প্রকৃতির, যার দৈর্ঘ্য ২২৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৯৫ মিটার। নদীটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কংস নদীর উৎপত্তি ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগে গারো পাহাড়ের তুরা অঞ্চলে। সেখান থেকে এটি দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রবেশ করে। এরপর নেত্রকোণার দুর্গাপুর হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। সোমেশ্বরী এবং কংসের মিলিত প্রবাহ পরবর্তী সময়ে বাউলাই নামে পরিচিত।

নদীটি ফুলপুর, নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, পূর্বধলা, দুর্গাপুর, নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ এবং ধর্মপাশা উপজেলাগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কংস নদী বর্ষায় ভরা যৌবনে টইটম্বুর থাকে এবং আশপাশের জমিতে পলি জমা করে উর্বরতা বাড়ায়। একসময় এই নদীর পানিপ্রবাহ বারোমাসী ছিল। এর জলাধার থেকে কৃষি কাজে পানি সেচ দেওয়া হতো এবং স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। নদীটি ছিল ধান, পাট এবং অন্যান্য শস্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম।

কংস নদীর বর্তমান অবস্থা ও বিলুপ্তির কারণঃ
বর্তমানে কংস নদী তার প্রাকৃতিক প্রবাহ এবং অস্তিত্ব হারানোর দ্বারপ্রান্তে। একসময় যেই নদীটি ছিল স্থানীয় জীবিকা, কৃষি ও পরিবহনের প্রাণকেন্দ্র, আজ তা দখল, দূষণ এবং প্রাকৃতিক প্রবাহের বাধার কারণে সংকুচিত ও প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। নদীর দুই তীরের জমি ক্রমাগত দখল এবং নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় এটি কেবল বর্ষার মৌসুমে সামান্য পানি প্রবাহিত করে।

ব্রিটিশ আমলে ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ (CS) জরিপের সময় কংস নদীর দুইপাশের জমি স্থানীয় বাসিন্দাদের মালিকানায় দেওয়া হয়। কালক্রমে এই মালিকানার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর মধ্যবর্তী অংশও দখল করে। বর্তমানে নদীর খাস জমি এবং প্রাকৃতিক প্রবাহের এলাকা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা দখল হয়ে গেছে। নদীতে স্থানীয় জনগণ এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন, এবং অন্যান্য কঠিন বর্জ্য ফেলা হয়। ফলে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে প্রবাহ কমে গেছে। দখলকৃত জমিতে অবৈধভাবে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ঝুলন্ত বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা থেকে উৎপন্ন বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে পরিবেশ আরও দূষিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজশে নদীর খাস জমি দখল ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বাঁধ এবং স্থাপনার কারণে প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এটি বর্ষায় প্লাবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যায়।

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কিছু অশেং ৬০-এর দশকে ডিএনডি বাঁধ নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ফলে কংস নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। নদী সংলগ্ন খাল ও শাখাগুলো বেদখল হয়ে যায় এবং প্রবাহ হারিয়ে নদীটি অনেকাংশে অদৃশ্য হয়ে গেছে। দখলদারদের আগ্রাসনে নদীটি ভরাট হয়ে এখন শুধুই স্মৃতি।

কংসের ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ

কংস নদী এক সময় প্রাচীন বাণিজ্যপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ধান, পাট, মসলা, কাঠ ইত্যাদি এই নদীপথে পরিবহন করতেন। নদীটির মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো সহজেই একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

নদীটি বর্ষাকালে আশপাশের জমি উর্বর করত এবং কৃষিকাজের জন্য পানি সরবরাহ করত। একসময় কংস নদীর পানি সেচের জন্য প্রধান উৎস ছিল। কংস নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা জনবসতিগুলো ছিল প্রাচীনকালের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। স্থানীয় জনগণ নদী থেকে মাছ ধরে এবং পাড়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে কংস নদী ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। স্থানীয় নৌকা, বড় বড় পালতোলা নৌযান এবং বার্জ চলাচলের মাধ্যমে শস্য ও পণ্য পরিবহন করা হতো। কংস নদীকে ঘিরে স্থানীয় সংস্কৃতিতে বিভিন্ন গান, লোককথা ও লোকজ উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর সৌন্দর্য ও তার পরিবেশ স্থানীয় কবি ও শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছে। কংস নদী কেবল একটি প্রাকৃতিক জলস্রোত নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। বর্তমান সময়ে নদীটির বিলুপ্তির প্রবণতা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রতি আমাদের দায়িত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

কংস নদীর বিলুপ্তির প্রভাবঃ

কংস নদীর সংকট শুধুমাত্র পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। নদীর দূষণ ও দখলের কারণে একাধিক সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা মানবজীবন ও প্রকৃতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

নদীর দূষিত পানি এবং জমে থাকা আবর্জনার কারণে আশেপাশের এলাকায় মশা-মাছি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া এবং ফাইলেরিয়াসিসের মতো রোগ ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে। কৃষিকাজ বা দৈনন্দিন কাজে দূষিত নদীর পানি ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ, পানিবাহিত রোগ (যেমন ডায়রিয়া, আমাশয়), এবং টাইফয়েডের মতো রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। নদীতে পলিথিন, প্লাস্টিক, এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষণ ঘটে। এটি আশেপাশের এলাকায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সেচের জন্য পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে চাষাবাদ কমে গেছে এবং খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

দূষিত নদীর পানি ব্যবহারে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়ে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষার সময় নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে, যা ফসল নষ্ট করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে কৃষি জমিকে অনুপযোগী করে তুলছে। নদীর দূষণ এবং দখলের কারণে মাছ, কাঁকড়া, জলজ পোকামাকড় এবং নদীর আশপাশের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যের এই ক্ষতি প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ধারণ করার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে বর্ষায় প্লাবন এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

নদীর দখল ও দূষণের কারণে প্লাবন, খরা এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বেড়েছে কংস নদীর সংকট কেবল প্রাকৃতিক ভারসাম্যই নষ্ট করছে না, বরং স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলছে।

সমাধান ও পদক্ষেপঃ

কংস নদীর সংকট সমাধানের অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ হলো অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা। ব্রিটিশ আমলে সিএস জরিপের সময় চিহ্নিত নদীর জায়গাগুলো বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানার অধীনে চলে যাওয়ায় নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মহল এই জায়গাগুলোতে আবাসন, ব্যবসায়িক স্থাপনা এবং অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্প তৈরি করে নদী ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করেছে। দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজন। দখলমুক্ত নদী নিশ্চিত করতে উচ্ছেদ কার্যক্রমের পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। এই কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নাগরিক সমাজকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নদীর পুনর্গঠন ও সঠিক জলপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য কংস নদীর খনন একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। বছরের পর বছর পলি জমে এবং আবর্জনা ভরাটের কারণে নদীর গভীরতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে। নদী খননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ পুনঃস্থাপন সম্ভব, যা বর্ষাকালে বন্যা প্রতিরোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষি ও গৃহস্থালির জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করবে। খননের সময় প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা এবং নদীর তীর সংরক্ষণে বিশেষ নজর দিতে হবে।

কংস নদী দূষণ রোধে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। শিল্প বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য, এবং পলিথিনের অবাধ নিষ্কাশন বন্ধ করতে পরিবেশ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট স্থাপন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালা ও প্রচার কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। দূষণ প্রতিরোধে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

কংস নদী রক্ষার জন্য স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। নদীর দূষণ ও দখলের ফলে ক্ষতি সম্পর্কে স্থানীয় জনগণকে অবহিত করতে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতন করতে নদীর গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। একই সঙ্গে নদী রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, নদী উৎসব ইত্যাদি আয়োজন করা যেতে পারে।

নদী রক্ষার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নজরদারি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কংস নদীর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় নিয়মিত মনিটরিং সিস্টেম চালু করতে হবে। স্যাটেলাইট ম্যাপিং, ড্রোন পর্যবেক্ষণ, এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নদীর বর্তমান অবস্থা নিরীক্ষণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। যেকোনো দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং নাগরিক কমিটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

দখলদার উচ্ছেদ, নদী খনন, দূষণ রোধ, এবং প্রশাসনিক নজরদারির মাধ্যমে কংস নদীর পুনরুদ্ধার সম্ভব। এটি স্থানীয় কৃষি ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে পুনরুজ্জীবিত করবে, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখবে, এবং জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই উদ্যোগ কংস নদীর পুনরুত্থানের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে।

কংস নদী বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর প্রবাহ শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য, কৃষি, এবং অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ব্রিটিশ আমলের সিএস জরিপে কংস নদীর অস্তিত্ব যেমন একটি সাংস্কৃতিক চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, তেমনই এটি ছিল হাজারো মানুষের জীবিকা ও জীবনের সঙ্গে জড়িত। তবে দখল, দূষণ, এবং অবহেলার কারণে আজ এই নদী হারিয়ে যাওয়ার পথে। একটি জাতির নদী যেমন তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক, তেমনই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। কংস নদী পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ শুধু পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে না, এটি দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই একটি জাতি তার প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঐতিহ্য রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে, তখনই তারা উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। কংস নদীর পুনর্গঠন শুধু একটি পরিবেশগত দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব। নদীকে রক্ষা করা মানে দেশের মানুষকে, সংস্কৃতিকে এবং জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করা। এটাই আমাদের টেকসই উন্নয়নের পথ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার অঙ্গীকার।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট