নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি এক জাতীয় সংলাপে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচনী আইন এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। রাজধানী ঢাকার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপের দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, ‘‘এ সময়ে রাষ্ট্রের কিছু সংস্কার করতে না পারলে আর কখনোই তা করা যাবে না।’’
এম সাখাওয়াত হোসেন ২০০৭ সালে কিছু সংস্কার চেষ্টার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘‘তবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে সেগুলো কার্যকর হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন যদি না করি, সংবিধানের দোহাই দিই, তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রক্তদানকারীদের প্রতি অবিচার হবে।’’ তাঁর মতে, রাজনৈতিক সংস্কার এক বছরের মধ্যে সম্ভব, কিন্তু এই সুযোগ হারালে তা আর কখনোই সম্ভব হবে না।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান, ‘‘তাদের নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘নতুন রক্তের প্রয়োজন, তাদের যদি উৎসাহিত না করেন, তাহলে আওয়ামী লীগের পতন দেখা যাবে।’’
সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচনী আইন এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিষয়ে বলেন, ‘‘নির্বাচন আইন পরিবর্তন করে কিছু হবে না, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং পদ্ধতির পরিবর্তন হলেই নির্বাচনী আইনও পরিবর্তিত হবে।’’ তিনি সাম্প্রতিক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম এবার যারা নির্বাচনে যাবে, তাদের জন্য আম-ছালা দুটোই যাবে।’’ তিনি দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এখন রাজনৈতিক দলগুলো মিস্টার আলম-টালমের মতো লোকের পয়সায় চলছে এবং চাঁদাবাজি করছে।’’
সাখাওয়াত হোসেন ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের ছাত্রদের রাজনীতি করতে হবে, তবে তা অবশ্যই ছাত্র সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত, ছাত্রদল বা ছাত্রলীগের মাধ্যমে নয়।’’
তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেন। তাঁর মতে, ‘‘১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আইন করেছিলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।’’
সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব সময় ভালো চাই, কিন্তু আমাদের পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।’’ তিনি এও বলেন, ‘‘গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগ ধরে রাখতে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।’’
সংলাপে আরো বক্তব্য দেন গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর। সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচন যত দেরি হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ তত বাড়বে।’’ নূরুল কবীর বাংলাদেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দেশের সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ঘোচাতে আইনি ও সামাজিক কাঠামোর সংস্কারের আহ্বান জানান।
সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন।
এই সংলাপটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর গভীর আলোচনা তৈরি করেছে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য, সংস্কার এবং দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উঠে এসেছে।