ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশ্বের ১২৫টি নগরীর মধ্যে আজ রোববার সকালে বায়ুদূষণে ঢাকা শীর্ষে উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানচিত্রে ঢাকার বায়ুর মান (একিউআই) ছিল ৪৯৩, যা বায়ুর মান সূচকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচিত। সকালে এতটা ভয়াবহ দূষণ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি।
সকালে বায়ুর মান ৪৯৩, ভোরে ছিল ৫৭৫, আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ৪৯৩। তবে ভোর ৫টার দিকে এই মান বেড়ে ৫৭৫-এ পৌঁছায়, যা নগরবাসীর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমন পরিস্থিতিতে আইকিউএয়ারের পরামর্শ—নগরবাসীকে মাস্ক পরা, জানালা বন্ধ রাখা এবং বাইরে ব্যায়াম না করার নির্দেশনা দিয়েছে।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো পিএম ২.৫ কণা, যা মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। আজ ঢাকার বাতাসে এই ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার ৬৪ গুণ বেশি।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “আজকের বায়ুর মান সত্যিই ভয়ংকর। টানা তিন দিন ধরে যদি বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকে তবে সেই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়। ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের উচিত মানুষকে সতর্ক করতে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দেওয়া। কিন্তু প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।”
আজকের বায়ুদূষণে ঢাকার কিছু স্থানের মান এতটাই ভয়াবহ যে তা নজিরবিহীন।
সর্বোচ্চ দূষিত এলাকাগুলো হলো— গুলশান লেক পার্ক: একিউআই স্কোর ৭৬৯, গুলশান-২, রব ভবন: স্কোর ৭২৮, মার্কিন দূতাবাস এলাকা: স্কোর ৭০৬।
ক্যাপসের গবেষণা অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাস ছিল ঢাকার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের মাস। ওই মাসের গড় বায়ুর মান ছিল ২৮৮, যা গত ৯ বছরে সবচেয়ে খারাপ।
২০১৬ সাল থেকে প্রতি ডিসেম্বর মাসে ঢাকার বায়ুর মান খারাপ থাকলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ১৯৫, কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ২৮৮।
আজ বায়ুদূষণে ঢাকার পরেই আছে— ইরাকের বাগদাদ: স্কোর ৩৫৮, ভিয়েতনামের হ্যানয়: স্কোর ২১৯
অন্যদিকে, দেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুমান তুলনামূলকভাবে ভালো থাকলেও তা এখনো গ্রহণযোগ্য মাত্রার বাইরে। চট্টগ্রাম: স্কোর ১২৬, রাজশাহী: স্কোর ১৬৯, খুলনা: স্কোর ১৭৩।
বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বহুতল ভবন নির্মাণ, ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা বায়ুর মানকে দ্রুত খারাপ করে তোলে।
আইকিউএয়ার নগরবাসীকে সতর্ক করে বলেছে— বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে, খোলা জায়গায় ব্যায়াম করা যাবে না, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে, এছাড়া ধুলাবালি এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন,
“পরিবেশ অধিদপ্তরকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি সচেতনতা বাড়াতে বার্তা প্রচার করতে। কিন্তু তাদের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ঢাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”