ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে চলছে বাংলাদেশি সন্দেহে নাগরিকদের বেআইনিভাবে আটকের পর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর (পুশইন) প্রক্রিয়া। এতে হাজার হাজার দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে এসব ঘটনা।
সম্প্রতি মুম্বাইভিত্তিক নাগরিক সংগঠন ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ (সিজেপি) প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, আসামের ৩৩টি জেলায় ব্যাপক পুলিশি অভিযান চালিয়ে নারী, শিশু ও পুরুষদের বাংলাদেশি পরিচয়ে আটক করা হচ্ছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী তিস্তা শেতলবাদ।
সিজেপির তথ্যমতে, গত ২৩ মে থেকে আসামে ৩০০ জনকে আটক করা হয়। কোনো নোটিশ, মামলা বা আইনি ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদের পরিবারের অজান্তে তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হলেও প্রায় ১৪৫ জনকে পুশইন করা হয় বাংলাদেশের সীমান্তে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) পুশইনকৃত অনেককে ফেরত পাঠিয়েছে (পুশ ব্যাক)। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে।
সিজেপির প্রতিবেদনে ছয়জন নারীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে—হাজেরা খাতুন, সোনা বানু, রহিমা বেগম, জাহানারা বেগম, আসিফা বেগম ও সাহেরা খাতুন।
বরপেটা জেলার ভাল্লুকি গ্রামের হাজেরা খাতুন জানান, তাকে কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আটক করা হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে বাসে বসিয়ে রাখা হয়। পরে সীমান্তে নামিয়ে দেওয়া হয় কিছু বাংলাদেশি টাকা হাতে দিয়ে। বৃষ্টিভেজা রাত তাদের কাটাতে হয় খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে।
পরদিন সকালে বিজিবি সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে আলোচনার ভিত্তিতে তারা ভারতের দিকে ফিরে যেতে শুরু করেন। হাজেরা ও সোনা বানুকে এক ছাত্রনেতা উদ্ধার করেন বলে জানান হাজেরার ছেলে।
সিজেপির প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, আসামে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালি মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের ভাষ্য, আতঙ্ক এখন সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে—কে কখন আটক হবে, কেউ জানে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করে তাকে অন্য দেশে পাঠানোর আগে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া, ট্রাইব্যুনাল রায়, এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসবই উপেক্ষিত হচ্ছে আসামে।