জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের সময়কার সহিংসতা ও বিধিভঙ্গের ঘটনায় বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ জন শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।
গতকাল শনিবার (৩১ মে) অনুষ্ঠিত ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপিত তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৮(ক)(২) ধারা অনুযায়ী গঠিত কমিটির সুপারিশে উল্লেখ করা হয়—১৫ জনকে সরাসরি ছাত্র হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এবং আরও ১৯ জনকে মারামারি, ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত (Dismissal) করার প্রস্তাব করা হয়। সিন্ডিকেট সভায় এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বরখাস্ত: ১৫ জন চিকিৎসক-কর্মচারী, যাদের মধ্যে রয়েছেন ডা. আবু তোরাব মীম, ডা. মো. রিয়াদ সিদ্দিকী, এমএলএসএস, ড্রেসার, সুইপার, অফিস সহকারী ও ড্রাইভারসহ অনেকে। সহিংসতার অভিযোগে বরখাস্ত: ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, নিউরোলজি বিভাগের ডা. আহসান হাবিব, অনকোলজির অধ্যাপক ডা. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ, সহ আরও ১৬ চিকিৎসক। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে সতর্কীকরণ ও তিরস্কার: ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মকর্তা, যারা সিন্ডিকেট সভায় হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করেন।
অন্য একটি ঘটনায় অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হককে নিয়মবহির্ভূতভাবে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগে চাকরি থেকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগ করেন সহকর্মী অধ্যাপক ডা. নাসিমা আখতার।
এছাড়া বৈষম্যের শিকার কর্মচারীদের মধ্যে ৯৬ জনের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং ২২ জন কর্মচারীকে ভুতোপেক্ষাভাবে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সিন্ডিকেট সভায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তদন্ত চলমান থাকায় যাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তাদের বিষয়ে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত, যা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।