
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে দেবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে. ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হানাদারমুক্ত হয়েছিল দেবীগঞ্জ উপজেলা। সেই গৌরবময় দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) নানা কর্মসূচির আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
সকালে সাড়ে দশটায় উপজেলা চত্বর থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। সেখানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান। বক্তব্য দেন দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আকতার করিম এবং যুদ্ধকালীন কম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ভূঁইয়া। উপজেলা’র জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোরে থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ.কে. ভূঁইয়া, টি.ওয়াই.সি কমান্ডার হুমায়ুন কবির ও প্লাটুন কমান্ডার ফারুকের নেতৃত্বে প্রায় ১৬০০ মুক্তিযোদ্ধা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেবীগঞ্জের দিকে অগ্রসর হন। মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার করতে করতে অবস্থান জানান দিতে থাকেন, আর হানাদার বাহিনী পাল্টা গুলি চালাতে চালাতে পশ্চাদপসরণ করে।
বিলাসী চৌধুরী হাটে পাকবাহিনীর পশ্চাদপসরণের সংবাদ পৌঁছানোর পর মুক্তিযোদ্ধারা দেবীগঞ্জের দিকে দ্রুত এগিয়ে যান। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পুকুরের উঁচু টিলায় অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা ফায়ার চালাতে থাকেন। এসময় গোলাগুলিতে কৃষি ফার্মের ড্রাইভার নওশাদের পিতা নিহত হন।
পরে পাকবাহিনী চিলাই হয়ে সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায় এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। একটি শেল গিয়ে পড়ে ডাক্তার বছির উদ্দিনের বাড়িতে। হানাদাররা পুরোপুরি পিছু হটলে মুক্তিযোদ্ধারা সাবেক আনসার ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে ৩১বার সম্মানসূচক ফায়ার করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে দেবীগঞ্জে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অংশ নেওয়া অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ইতিহাসে নিবন্ধন না হলেও তাঁদের অবদান অপরিসীম।
যুদ্ধ-পরবর্তী প্রায় ৫ মাস দেবীগঞ্জ থানার দায়িত্বে ছিলেন এ.কে. ভূঁইয়া। পরে ১৯৭২ সালের ২০ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অস্ত্র জমা দেন।